যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে নানা ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন, এটিই চূড়ান্ত শুল্ক। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি বাড়তি শুল্ক হিসেবে আগের শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এখন নতুন করে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ক্ষেত্রে ন্যূনতম শুল্ক দাঁড়াবে ৫২ শতাংশে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্তে পৃথিবীজুড়ে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ট্রাম্প চীন ও এশিয়ার দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো কিছুটা চাপে থাকবে।

এ অবস্থায় সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এই শুল্ক কমানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের শুল্ক এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছে। ফলে দর-কষাকষিতে তারা এগিয়ে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি কিছু কিছু দেশ আগেই ধারণা করতে পেয়েছিল। এ কারণে এসব দেশ আগে থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে ধরনের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না।সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার

আমি মনে করি বাংলাদেশের যেসব পণ্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছে গেছে, পাল্টা শুল্কের কারণে সেগুলোরও দাম বাড়বে। আর পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তাতে একদিকে বাড়বে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের ক্রয়াদেশ কমে যাবে। এতে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি কিছু কিছু দেশ আগেই ধারণা করতে পেয়েছিল। এ কারণে এসব দেশ আগে থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে ধরনের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলেও এখন সরকারের উচিত দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। শুল্ক কমানোর উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ জন্য ব্যবসার খরচ কীভাবে কমানো যায় তার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে পণ্য উৎপাদনে বিদ্যমান যে শুল্ক–কর রয়েছে, সেটিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।

সেই সঙ্গে ব্যবসার খরচ কমাতে পরিবহন ও সরবরাহ ব্যয় হ্রাস, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, দুর্নীতি কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারব।

তবে এ কথা সত্য, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, সেই পরিমাণ উৎপাদন খরচ আমরা হুট করে কমিয়ে ফেলতে পারব না। তাই এ ক্ষেত্রে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুচিন্তিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য বড় বাজার। পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছিল এই বাজারে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই অবস্থান ধরে রাখতে বেসরকারি খাত, গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে দেশটির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার ১০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এই বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে আমাদের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যান্ড রিটেলারসের প্রেসিডেন্ট ম্যাট রিস্ট আমাদের জানিয়েছেন, পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ইউবিএসের এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, দেশটিতে ভিয়েতনামের পণ্যের দাম ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়তে পারে।

সেটি হলে ক্রেতাদের কেউ কেউ বাড়তি এই শুল্কের একটি অংশ সরবরাহকারীদের ওপরও চাপিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে। আমার মনে হয় না তখন বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে মিলে এই কম দামের বিরোধিতা করতে পারবে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প পদক ষ প ন আম দ র ব যবস সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে নতুন করে শুরু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সোমবার সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ