পরিস্থিতি মোকাবিলায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে
Published: 5th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে নানা ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন, এটিই চূড়ান্ত শুল্ক। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি বাড়তি শুল্ক হিসেবে আগের শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এখন নতুন করে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ক্ষেত্রে ন্যূনতম শুল্ক দাঁড়াবে ৫২ শতাংশে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্তে পৃথিবীজুড়ে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ট্রাম্প চীন ও এশিয়ার দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো কিছুটা চাপে থাকবে।
এ অবস্থায় সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এই শুল্ক কমানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের শুল্ক এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছে। ফলে দর-কষাকষিতে তারা এগিয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি কিছু কিছু দেশ আগেই ধারণা করতে পেয়েছিল। এ কারণে এসব দেশ আগে থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে ধরনের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না।সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারআমি মনে করি বাংলাদেশের যেসব পণ্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছে গেছে, পাল্টা শুল্কের কারণে সেগুলোরও দাম বাড়বে। আর পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তাতে একদিকে বাড়বে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের ক্রয়াদেশ কমে যাবে। এতে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি কিছু কিছু দেশ আগেই ধারণা করতে পেয়েছিল। এ কারণে এসব দেশ আগে থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে ধরনের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলেও এখন সরকারের উচিত দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। শুল্ক কমানোর উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ জন্য ব্যবসার খরচ কীভাবে কমানো যায় তার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে পণ্য উৎপাদনে বিদ্যমান যে শুল্ক–কর রয়েছে, সেটিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
সেই সঙ্গে ব্যবসার খরচ কমাতে পরিবহন ও সরবরাহ ব্যয় হ্রাস, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, দুর্নীতি কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারব।
তবে এ কথা সত্য, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, সেই পরিমাণ উৎপাদন খরচ আমরা হুট করে কমিয়ে ফেলতে পারব না। তাই এ ক্ষেত্রে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুচিন্তিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য বড় বাজার। পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছিল এই বাজারে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই অবস্থান ধরে রাখতে বেসরকারি খাত, গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে দেশটির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার ১০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এই বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে আমাদের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যান্ড রিটেলারসের প্রেসিডেন্ট ম্যাট রিস্ট আমাদের জানিয়েছেন, পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ইউবিএসের এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, দেশটিতে ভিয়েতনামের পণ্যের দাম ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়তে পারে।
সেটি হলে ক্রেতাদের কেউ কেউ বাড়তি এই শুল্কের একটি অংশ সরবরাহকারীদের ওপরও চাপিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে। আমার মনে হয় না তখন বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে মিলে এই কম দামের বিরোধিতা করতে পারবে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প পদক ষ প ন আম দ র ব যবস সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’
অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।
জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া