ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত
Published: 7th, April 2025 GMT
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ক্লাস বর্জন করলে শিক্ষার্থীদের ডাবল অ্যাবসেন্ট দেওয়ার হুমকি দেওয়া সেই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাহমিনা রহমানকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে।
তাহমিনা রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টির জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।
জানা যায়, ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের চলমান নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি পালন করতে সোমবার ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নেন ড্যাফোডিলের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানার পর প্রভাষক তাহমিনা শিক্ষার্থীদের গ্রুপে জানান, ক্লাসে না আসলে ডাবল অ্যাবসেন্ট দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি কথপোকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তীব্র সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করল।
যদিও এ ঘটনায় শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার কথার ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে গভীর কষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। আমি কখনোই ফিলিস্তিন ও গাজার মজলুম মুসলিমদের ওপর নিকৃষ্ট ইসরাইলের ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞ সমর্থন করিনি, এখনও করি না, কখনোই করব না।’
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে স্ক্রিনশটগুলো ছড়িয়ে পড়েছে, তা তার প্রকৃত মনোভাবের প্রতিফলন নয়। তার কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তাহমিনা বলেন, ‘আমি নিঃসন্দেহে গাজা ও তার জনগণের পাশে আছি। তাদের ন্যায্য অধিকার, স্বাধীনতা এবং জীবনের নিরাপত্তার পক্ষে আমি সবসময়ই দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছি ও ভবিষ্যতেও নেব।’
তিনি তার ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্তকে শুরুতে একটি ছোট পরিসরের বিষয় বলে ভেবেছিলেন, যা পরবর্তীতে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখা দেয়। তিনি স্বীকার করেন, বিষয়টি পুরোপুরি না বোঝার কারণে তার প্রতিক্রিয়া যথাযথ ছিল না এবং সে জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
তার এই ব্যাখ্যা ও দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থী, সহকর্মী, বন্ধু এবং যারা এই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল বরখ স ত রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?