খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা পুরোপুরি কাটেনি। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে শিক্ষক সমিতি। ফলে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী রোববারের মধ্যে তা কার্যকর হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বুধবার রাতে অনশন ভাঙেন এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন। আপাতত তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।
শিক্ষকরা জানান, ১৭ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, যারা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের মারধর-লাঞ্ছিত করেছে এবং পরে শিক্ষকদের সাইবার বুলিং করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। দায়ী শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে অধ্যাপক ড.
এ ব্যাপারে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাসে যাবেন না। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আগামী ৩০ এপ্রিল আবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা করব। দায়ীদের চিহ্নিত করার পর তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কিছু নতুন শিক্ষার্থী এসেছেন। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখনও আসেননি। ক্যাম্পাসের প্রধান গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যসহ ছয়-সাত শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেউ শিক্ষকদের মারধর বা লাঞ্ছিত করেননি। শিক্ষক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, সাধারণ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। এখনও কয়েক দিন সময় আছে, শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।’
কথা বলার জন্য রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান ভূঁইয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, ‘ক্লাস শুরুর কথা আগামী ৪ মে। এখনও সময় আছে। দেখা যাক, শিক্ষক সমিতির পরবর্তী সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়।’
উল্লেখ্য, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দেড় শতাধিক আহত হন। ওই দিন থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল উপাচার্যকে অপসারণের এক দফা দাবি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র উপ চ র য ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ