চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনালের আগে লা লিগা শিরোপার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। শনিবার রেলিগেশন নিশ্চিত হওয়া রিয়াল ভায়াদোলিদের মাঠে ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছে হ্যান্সি ফ্লিকের দল। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে রাফিনিয়া ও ফারমিন লোপেজের গোলে জয় নিশ্চিত করে কাতালানরা।

স্পেনে প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের সঙ্গে ৩-৩ গোলের নাটকীয় ড্রয়ের পর বুধবার সান সিরোতে দ্বিতীয় লেগে নামবে বার্সা। সেই ম্যাচের কথা মাথায় রেখে এদিন মূল একাদশে বেশকটি পরিবর্তন আনেন কোচ ফ্লিক। তবে দলের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। ম্যাচের ৬ মিনিটেই রিয়াল ভায়াদোলিদকে এগিয়ে দেন ইভান সানচেজ। তার শট বার্সা ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহোর পায়ে লেগে দিক বদলে গোলরক্ষক টের স্টেগেনকে পরাস্ত করে জালে জড়ায়। সেপ্টেম্বরের পর এ ম্যাচেই প্রথমবার মাঠে নামেন এই জার্মান গোলরক্ষক। 

কাতালানরা প্রথমার্ধে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য আক্রমণ তৈরি করতে পারেনি। আরও দুঃসংবাদ আসে যখন অভিষেক ম্যাচেই কাঁধে ইনজুরিতে পড়েন তরুণ মিডফিল্ডার দানি রদ্রিগেজ। মাত্র আধা ঘণ্টা খেলেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। মিনিট দুয়েক ওয়ার্ম আপ করে ৩৮তম মিনিটে মাঠে আসেন লামিনে ইয়ামাল। 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাফিনিয়া, ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে মাঠে নামান বার্সেলোনা কোচ। তাতে সফরকারীদের খেলার গতি  বাড়ে। সেটার ফল আসে ম্যাচের ৫৪ মিনিটে। ইয়ামালের ক্রসে একটুর জন‍্য হেড করতে পারেননি আরাউহো। এগিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করেন ভায়াদোলিদের গোলরক্ষক। তবে সেই বল পেয়ে যান রাফিনিয়া। ঠাণ্ডা মাথার শটে গোল করে বার্সাকে সমতা এনে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এর মাত্র ৬ মিনিট পর গোলের দেখা পান ফারমিন লোপেজ। এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। বক্সের বাইরে থেকে তার নিচু শট জড়িয়ে যায় জালে। শেষ দিকে ইয়ামাল একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেলেও তার শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার আন্তোনিও কানদেলা। শেষ পর্যন্ত লা লিগায় পয়েন্ট টেবিলের দুই প্রান্তে থাকা দুই দলের ম‍্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। 

এই জয়ে ৩২ ম্যাচে ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে এগিয়ে ৭ পয়েন্টে, যারা রোববার সেল্টা ভিগোর মুখোমুখি হবে। লিগে আর মাত্র চারটি ম্যাচ বাকি। এর মধ্যে একটিতে বার্সেলোনা ঘরের মাঠে রিয়ালের বিপক্ষে নামবে ক্লাসিকো লড়াইয়ে।

সপ্তাহখানেক আগে কোপা দেল রে'র ফাইনালে রিয়ালকে হারিয়েই ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে বার্সেলোনা। এখন অপেক্ষা, ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বুধবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল দ্বিতীয় লেগে কেমন পারফর্ম করে তারা। তার আগে এই জয় নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে কাতালানদের।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ