ময়মনসিংহ শহরের এপেক্স হসপিটালে টনসিলের অপারেশন করাতে গিয়ে চিকিৎসকের অসতর্কতায় শ্বাসনালি কেটে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া ১২ বছরের শিশু তাইয়্যিবা তাবাসসুম তন্দ্রা ত্রিশাল পৌর শহরের রাহেলা-হযরত মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। 

তন্দ্রা উপজেলার বীররামপুর গফাকুড়ি মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মো.

গোলাপ মিয়ার কন্যা। পারিবারিক সূত্র যায়, ছোট্ট শিশুটি টনসিলের সমস্যায় ভুগছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকার এপেক্স হসপিটালের চিকিৎসক কামিনী কুমার ত্রিপুরার কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুটিকে অপারেশনের জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

নিহত শিশুর স্বজনের অভিযোগ, টনসিলের অপারেশনের সময় চিকিৎসকের অসতর্কতার কারণে তার শ্বাসনালি কেটে যায়। এতে অপারেশনের টেবিলেই মৃত্যু হয় তার।
কামিনী কুমার ত্রিপুরা কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক। অবসরে এপেক্স হাসপাতালে রোগী দেখেন তিনি। এ ব্যাপারে ডা. কামিনী কুমার ত্রিপুরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

রোববার বিকেলে গোলাপ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তন্দ্রার অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা বাবা-মা। চোখের সামনে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক শিশুর অপারেশনের টেবিলে এভাবে মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। 

নিহতের চাচা আবুল কালাম বলেন, আমরা আমাদের মেয়েকে সুস্থ করার আশায় এ হাসপাতালে এনেছিলাম। আর এ ডাক্তারই আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলল। এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা স্পষ্টতই ডাক্তারের অবহেলা। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই। অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত এবং অভিযুক্ত ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

রাহেলা-হযরত মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল বলেন, এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি নয়, এটি সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। আমাদের সবার প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবী (সা.)-কে নিয়ে জাবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। এ অভিযোগ ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে নবীনদের আবাসন সংকট নিরসনে ছাত্রশিবিরের ৪ দাবি

চবি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা, ‘রাসূলের অপমান, সইবে নারে মুসলমান’, ‘শাতিমের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘বিচার চাই, শাতিমের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। 

সমাবেশে বাংলা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা আজ ব্যথিত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এই কটুক্তি আমাদের মনে শতগুণে বেশি আঘাত করেছে। প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাই, রবিবারের মধ্যে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে নিন্দা জানিয়ে তৌফিক নাবিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)–কে নিয়ে কটূক্তি করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোটি মুসলমানের হৃদয়ে গভীর আঘাত হেনেছে। এই জঘন্য আচরণ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

তিনি বলেন, “আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে জোর দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এই ছাত্রের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমরা আশা করি, প্রশাসন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে, যেন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা যায়। ধর্মীয় অনুভূতির অপমান কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়, এটি অপরাধ। এই অপরাধের বিচার হতেই হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, স্পর্শকাতর এবং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই ঘটনার সত্যতা নিরূপণে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি এই পোস্ট করিনি। কেউ আমার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম. রাশিদুল আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চিঠি দিয়েছে। আমি সেটি উপাচার্য স্যারের কাছে ফরওয়ার্ড করেছি এবং তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহানবী (সা.)-কে নিয়ে জাবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ