অপারেশনে চিকিৎসকের অসতর্কতায় শ্বাসনালি কেটে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ
Published: 11th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহ শহরের এপেক্স হসপিটালে টনসিলের অপারেশন করাতে গিয়ে চিকিৎসকের অসতর্কতায় শ্বাসনালি কেটে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া ১২ বছরের শিশু তাইয়্যিবা তাবাসসুম তন্দ্রা ত্রিশাল পৌর শহরের রাহেলা-হযরত মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
তন্দ্রা উপজেলার বীররামপুর গফাকুড়ি মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মো.
নিহত শিশুর স্বজনের অভিযোগ, টনসিলের অপারেশনের সময় চিকিৎসকের অসতর্কতার কারণে তার শ্বাসনালি কেটে যায়। এতে অপারেশনের টেবিলেই মৃত্যু হয় তার।
কামিনী কুমার ত্রিপুরা কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক। অবসরে এপেক্স হাসপাতালে রোগী দেখেন তিনি। এ ব্যাপারে ডা. কামিনী কুমার ত্রিপুরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
রোববার বিকেলে গোলাপ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তন্দ্রার অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা বাবা-মা। চোখের সামনে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক শিশুর অপারেশনের টেবিলে এভাবে মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
নিহতের চাচা আবুল কালাম বলেন, আমরা আমাদের মেয়েকে সুস্থ করার আশায় এ হাসপাতালে এনেছিলাম। আর এ ডাক্তারই আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলল। এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা স্পষ্টতই ডাক্তারের অবহেলা। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই। অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত এবং অভিযুক্ত ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
রাহেলা-হযরত মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল বলেন, এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি নয়, এটি সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। আমাদের সবার প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’