গরম পড়তে না পড়তেই ঘরে পিঁপড়ার উপদ্রব শুরু হয়েছে । মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে এই উপদ্রব আরও বাড়ে। এ সময় কোথাও কোনও খাবার রাখাটাই দায় হয়ে ওঠে।  বিশেষ করে চিনির কৌটা যেখানেই রাখুন না কেন, পিঁপড়ারা সেখানেই উপদ্রব শুরু করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু টিপস জেনে রাখুন। যেমন-

সঠিক পাত্র বেছে নিন : চিনি রাখার জন্য একটি উপযুক্ত পাত্র বেছে নিন। চিনি স্টিল বা কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করলে ভালো। পাত্রের ঢাকনা যেন ভাল করে বন্ধ থাকে সেদিকে খেয়াল । বায়ুনিরোধক পাত্রে চিনি রাখুন। এতে বৃষ্টিতেও চিনিতে জল কাটবে না।

লবঙ্গ: ঢাকনা শক্ত থাকার পরেও যদি পিঁপড়া পাত্রে ঢুকে পড়ে তাহলে তা প্রতিরোধ করার জন্য চিনির পাত্রে কয়েকটি লবঙ্গ রাখতে পারেন। লবঙ্গের গন্ধের কারণে পিঁপড়া দূরে থাকবে।

তেজপাতা : চিনির পাত্রে তেজপাতাও রাখতে পারেন। তাহলে পিঁপড়া চিনির পাত্রের কাছে ঘেঁষবে না।

রসুন : চিনির পাত্রে রসুনের কয়েকটি কোয়া ছাড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে পিঁপড়া আসতে পারবে না। চাইলে রসুন গুঁড়ো করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে পারেন। এই পানি ঠান্ডা করে একটি স্প্রে বোতলে ভরে চিনির বাক্সের বাইরের দিকে স্প্রে করে দিতে পারেন। রসুনের গন্ধ পিঁপড়াকে দূরে রাখে।

ভিনেগার: কাপড়ে ভিনেগার ছিটিয়ে চিনির পাত্রের নিচে রাখতে পারেন। এতেও পিঁপড়া দূরে থাকবে। সহজে কাছে আসবে না। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পানি নিয়ে ‘অমৃত’র অনাচার

ভূগর্ভের পানি তুলে বোতলজাত করে ব্যবসা করছে ‘অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট’ নামে একটি কোম্পানি। বাবুগঞ্জের রহমতপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে কারখানার জন্য একটি গভীর নলকূপের অনুমোদন নেয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটারের অনুমতি নিয়ে আরও তিনটি কূপ স্থাপন করে এক লাখ লিটার পানি তুলে বিক্রি শুরু করে। পানি নিয়ে অমৃতের এ অনাচারে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 
পানির জন্য হাহাকার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন, কারখানা নির্মাণ এবং এসবের জন্য পানির চাহিদা মেটাতে বাবুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসানো হয়েছে। এতে পানির স্তর নেমে গেছে। ৮০ ভাগ নলকূপ এখন অকেজো। আগে যেখানে ৭৫০ থেকে ৮০০ ফুট নিচে গেলে নলকূপে মিলত বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন সাড়ে ৯০০ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি তোলা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছয় ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রামে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মাধবপাশা ইউনিয়নের। এখনই পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাজুড়ে পানির হাহাকার আরও বাড়বে। 
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুমন বলেন, অমৃত গ্রুপ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে কিনা, সেটি তদন্তের পর সত্যতা পেলে কেবল সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে; এর আগে নয়। 
এদিকে, পানি নিয়ে অমৃতের অনাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী এম মাসুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, অমৃত গ্রুপ সরাসরি ভূগর্ভ থেকে মোটা পাইপ ও পাম্পের সাহায্যে লাখ লাখ লিটার পানি তুলে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাদের বলা হয়েছে, পানি বিক্রির ব্যবসা চালাতে হলে নদী কিংবা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ৯ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 
মাধবপাশা ইউনিয়নের পূর্ব পাংশা গ্রামের শাহনাজ পারভীনের অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। আশপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। কিছুদিন ফিটকিরি দিয়ে, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পুকুরের পানি পান করেছেন। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে সিকদারবাড়ির হাউজিংয়ের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও কয়েকবার চাপার পর নলকূপ থেকে পানি ওঠে। 
যেভাবে অনিয়মের শুরু
মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে দেড় যুগ আগে অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু। প্যাকেট গুঁড়া মশলা, বোতলজাত সরিষার তেল বাজারজাত করত প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালে ওয়ারপো থেকে যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বোতলজাত (অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটার) পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। পুরোনো কারখানার এক পাশে ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করে তারা। প্রথমে একটি ছয় ইঞ্চি ব্যাসের কূপের অনুমোদন নিয়ে পরে অবৈধভাবে আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও চারটি কূপ থেকে গড়ে এক লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করেছে। অভিযোগ পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় ওয়ারপো পরিদর্শক টিম। 
যা বলছে ওয়ারপো
সমকালের পক্ষ থেকে ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৯৬০ ফুট গভীরতায় ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপের সাহায্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছিল। ১৬ হাজার লিটার পানি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আরও তিনটি কূপের মাধ্যমে ৮০ হাজার লিটার পানির জন্য আবেদন করে। এ আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এরপরও তারা বড় একটি কূপ থেকে ৩৫ হাজার লিটার পানি তুলছে এমন প্রমাণ পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। 
ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম রয়েল বলেন, অনুমোদনের আগে অন্য কোনো কূপ থেকে পানি তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অমৃত গ্রুপকে সাবধান করা হয়েছে। 
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অমৃতের প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ। তাঁর দাবি, ১৬ হাজারের অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন ১৪ হাজার লিটার পানি আহরণ করছেন। এতে এলাকাবাসীর টিউবওয়েলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি পানি সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করছে। তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র অমৃত গ্রুপের হেড অফিসে রক্ষিত আছে বলে দাবি তার। 
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বা অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদা ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানা নেই। 
ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অমৃত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোন প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ পানি ভূগর্ভের উৎস থেকে তুলেছে, তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ