দেশকে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
Published: 20th, May 2025 GMT
দেশকে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউসে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ আয়োজিত ‘পোভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বাংলাদেশ আর আগের জায়গায় যাবে না। বাংলাদেশ একটি নতুন জায়গায় যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া। অভ্যুত্থানের পর সবকিছু যেভাবে সাজানো হচ্ছে, সেখানে কিছু ব্যত্যয় থাকলেও মানুষের মধ্যে যে প্রেরণা জেগেছে, সেটি আর থেমে থাকবে না। মানুষ এখন আর অন্যায় সহ্য করে না। নির্বাচিত হয়ে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাকে এই পরিবর্তনের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে।
বরিশালের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো.
সেমিনারে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের বড় কারণ হলো প্রভাবশালীদের মাধ্যমে জমি বেহাত হওয়া। আর ত্রুটিপূর্ণ আইনি ব্যবস্থায় তা পুনরুদ্ধার করতে গেলে ওই ব্যক্তিকে সর্বস্বান্ত হতে হয়। কাজেই দারিদ্র্য শুধু আয়-রোজগার দিয়ে হয় না। তিনি বলেন, পুলিশের কাছ থেকে ভালো সেবা না পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে পুলিশও দারিদ্র্যের কারণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা ঠিকমতো না হলে কেউ নিরাপদ নয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব মানুষ।
পুলিশ বিভাগের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশকে বেশিই খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে পুলিশ বিভাগকে নতুনভাবে তৈরি করতে চাই। এ জন্য পুলিশ বিভাগকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই। পুলিশ যেমন সবাইকে রক্ষা করে, তেমনি পুলিশকেও রক্ষা করতে হবে। এখানে জনগণের বড় দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনকে সহায়তা করা।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ছাড়া সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’
সেমিনারের আয়োজকেরা জানান, ‘পোভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ’ হলো ভৌগোলিকভাবে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দারিদ্র্যের মাত্রা ও বৈচিত্র্য চিত্রায়িত করা হয়। এটি বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদের, পরিকল্পনাবিদদের ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য দারিদ্র্য নিরসন পরিকল্পনায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ য় উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে
জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।
এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।
সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।