দেশকে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউসে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ আয়োজিত ‘পোভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বাংলাদেশ আর আগের জায়গায় যাবে না। বাংলাদেশ একটি নতুন জায়গায় যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া। অভ্যুত্থানের পর সবকিছু যেভাবে সাজানো হচ্ছে, সেখানে কিছু ব্যত্যয় থাকলেও মানুষের মধ্যে যে প্রেরণা জেগেছে, সেটি আর থেমে থাকবে না। মানুষ এখন আর অন্যায় সহ্য করে না। নির্বাচিত হয়ে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাকে এই পরিবর্তনের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে।

বরিশালের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো.

সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মইনুল হক আনছারী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলায়ার হোসেন। সেমিনারে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের বড় কারণ হলো প্রভাবশালীদের মাধ্যমে জমি বেহাত হওয়া। আর ত্রুটিপূর্ণ আইনি ব্যবস্থায় তা পুনরুদ্ধার করতে গেলে ওই ব্যক্তিকে সর্বস্বান্ত হতে হয়। কাজেই দারিদ্র্য শুধু আয়-রোজগার দিয়ে হয় না। তিনি বলেন, পুলিশের কাছ থেকে ভালো সেবা না পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে পুলিশও দারিদ্র্যের কারণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা ঠিকমতো না হলে কেউ নিরাপদ নয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব মানুষ।

পুলিশ বিভাগের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশকে বেশিই খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে পুলিশ বিভাগকে নতুনভাবে তৈরি করতে চাই। এ জন্য পুলিশ বিভাগকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই। পুলিশ যেমন সবাইকে রক্ষা করে, তেমনি পুলিশকেও রক্ষা করতে হবে। এখানে জনগণের বড় দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনকে সহায়তা করা।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ছাড়া সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’

সেমিনারের আয়োজকেরা জানান, ‘পোভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ’ হলো ভৌগোলিকভাবে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দারিদ্র্যের মাত্রা ও বৈচিত্র্য চিত্রায়িত করা হয়। এটি বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদের, পরিকল্পনাবিদদের ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য দারিদ্র্য নিরসন পরিকল্পনায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ য় উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ