চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী-সংলগ্ন ঘাট ও চোরাই তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গারচর ৯ নম্বর বিওসি ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাসদস্যরা।

জানা গেছে, ঘাটের নিয়ন্ত্রণ, চোরাই তেল ওঠানোর সিরিয়াল ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ চলছিল। গত মঙ্গলবার রাতে এক পক্ষের নেতাকর্মীরা ডাঙ্গারচর ৯ নম্বর বিওসি ঘাট দখলের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে বুধবার সকালে উভয় পক্ষ ঘাটে অবস্থান নেয়। এ সময় উত্তেজনা তৈরি হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ঘাট এলাকা থেকে জুলধা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাহারসহ চারজনকে আটক করে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সন্ধ্যায় আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলধা এলাকায় কর্ণফুলী নদীকেন্দ্রিক ‘পিলাই তেল’ (চোরাই তেল) ব্যবসায় এক সময় একক আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগের আব্দুল শুক্কুর ওরফে ‘তেল শুক্কুর’-এর। গত বছরের আগস্টে দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে দুই পক্ষের মধ্যে ১৫ দিন করে ভাগাভাগির বিষয়ে সমঝোতা হয়। পরে একটি পক্ষ সেখানে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে অপর পক্ষ বাধা দেয়।

ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ জানান, জুলধাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয়নি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ ব এনপ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে শিশুসন্তানকে পাটখেতে নিয়ে হত্যা, কথিত মামা গ্রেপ্তার

আট বছর বয়সের শিশু জিসানকে জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে সন্ধ্যায় মাদ্রাসা থেকে বাজারে নিয়ে যান কথিত মামা সোহেল রানা (২৮)। নতুন জুতা কিনে দেওয়ার পর রেস্তোরাঁয় নিয়ে খাওয়ান। রাত বেড়ে গেলে শিশুটি মাদ্রাসার যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। এরপরে বাজার থেকে রাত ১১টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে মাদ্রাসার পথে রওনা দেন তিনি। পথে একটি পাটখেতে নিয়ে মুখে ঘাস ও মাটিচাপা দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করেন কথিত এই মামা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে শিশু জিসান নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় কথিত মামা সোহেল রানাকে আটকের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ শুক্রবার সকালে পাটখেত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির মায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে সোহেল রানা শিশুটিকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় সোহেল রানাকে একমাত্র আসামি করে বিকেলে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেছেন শিশুটির মা জেসমিন আরা বেগম। তিনি উপজেলার চেংমারি উত্তরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকেন। ওই বাড়িতে একসময় কাজ করতেন সোহেল রানা। তাঁর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবি গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেসমিন একসময় ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেখানে বেলাল হোসেন নামের একজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান জিসান হোসেন। বছর পাঁচেক আগে বেলাল ভারতে পাড়ি জমান। তখন জেসমিন চাকরি ছেড়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গঙ্গাচড়ার চেংমারি উত্তরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়ি চলে আসেন। পরে শিশুসন্তান জিসানকে গঙ্গাচড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদিকুল ইসলাম এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক শাখায় ভর্তি করে দেন। শিশুটি মাদ্রাসায় থেকে নুরানি বিভাগে পড়ত।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, প্রায় এক ব্যক্তি মাদ্রাসায় এসে জিসানকে খাবার কিনে দিয়ে যেত। জিসান বলত, লোকটি তার মামা। বৃহস্পতিবার সন্ধায় ওই ব্যক্তি জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে জিসানকে মহিপুর বাজারে নিয়ে যান। রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা জিসানকে খুঁজলে সহপাঠীরা জানায়, জিসানকে তাঁর মামা বাজারে নিয়ে গেছেন। শিক্ষকেরা বিষয়টি জিসানের মাকে জানান। পরে মাদ্রাসা থেকে জিসানের এক সহপাঠীকে নিয়ে স্বজনেরা গভীর রাতে কথিত মামা সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে যান। তখন জিসানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। পরে কালিগঞ্জ থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ এসে সোহেল রানাকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় সোহেল রানা জিসানকে হত্যা করে গঙ্গাচড়ার একটি পাটখেতে লাশ পুঁতে রাখার কথা জানান। আজ সকালে তাঁকে নিয়ে গঙ্গাচড়ায় এসে থানা-পুলিশের সহায়তায় উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়ন পরিষদের মানাসপাড়া গ্রামের অদূরে একটি পাটখেত থেকে জিসানের লাশ উদ্ধার করা হয়।

গঙ্গাচড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ বলেন, জিসানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় দুই হাত ভাঙা এবং মুখে ঘাস ও মাটিচাপা দেওয়া ছিল। প্রাথমিকভাবে সোহেল রানা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, শিশুটির মায়ের কাছে সোহেল রানা ৫০ হাজার টাকা পেতেন। না দেওয়ায় তিনি পরিকল্পনা করে জিসানকে বাজারে ডেকে নিয়ে নতুন জুতা কিনে দেন। হোটেলে খাওয়ান। পরে মাদ্রাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার পথে পাটখেতে নিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ ফেলে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

শিশুটির মা জেসমিন আরা বেগম বলেন, সোহেল তাঁর বাবার বাড়িতে কাজ করতেন। তাঁর সন্তানসহ পরিবারের সবাই তাঁকে চিনতেন। বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি কাজ করেন না। তাঁর কাছে কোনো টাকাও পাবেন না। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জেসমিন আরা বেগম বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার একমাত্র বুকের ধন? তাকে কেন হত্যা করল? আল্লাহ ওর (সোহেল) বিচার করবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ