কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামারিরা যখন ব্যস্ত তাদের সেরা পশু প্রস্তুত করতে, তখন পঞ্চগড়ে আলোচনায় এসেছে বিশালাকৃতির একটি ষাঁড়। এর নাম রাখা হয়েছে ‘যুবরাজ’। নাম যেমন রাজকীয়, আকৃতিও তেমনই বিশাল। তার ওজন প্রায় ৪০ মণ, দৈর্ঘ্য ১১ ফুট আর উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।

শুধু ওজন বা আকার নয়, যুবরাজকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের কৌতূহলের বড় কারণ হলো—তাকে ঘরের দরজা দিয়ে বের করা যাবে না, ভাঙতে হবে দেয়াল। গরুটি জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছে একটি ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। কখনো বাইরে যায়নি। বিশাল আকৃতি হওয়ার কারণে এবার তাকে কোরবানির হাটে নিতে হলে দেয়াল ভেঙেই বের করতে হবে।

পঞ্চগড় পৌর শহরের কাগজিয়া পাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল কাশেম আবু এবং তার স্ত্রী সানোয়ারা খাতুন চার বছর ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন যুবরাজকে। 

আরো পড়ুন:

প্রতিদিন হাজার টাকার খাবার খায় ১১০০ কেজির ‘জেট ব্ল্যাক’

দিনাজপুরে প্রস্তুত ৪ লাখ কোরবানির পশু

তারা জানিয়েছেন, যুবরাজকে প্রতিদিন দুইবার গোসল এবং ১৫ কেজির বেশি খাবার দিতে হয়। এর মধ্যে আছে- ধানের কুঁড়া, খৈল, ছোলার ভুসি, খড়, ঘাস ও লবণ। এত যত্নে ও ভালোবাসায় গড়া ষাঁড়টি তাদের কাছে শুধু একটা পশু নয়, যেন পরিবারের এক সদস্য।

এবার কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্যই যুবরাজকে প্রস্তুত করেছেন আবুল কাশেম। যুবরাজের দাম হাঁকিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। 

আবুল কাশেম বলেছেন, ওকে (যুবরাজ) বিক্রি করতে মন চায় না। তবে, বাস্তবতা অন্য কথা বলে। চার বছর ধরে নিজের হাতে খাইয়ে বড় করেছি। রাসায়নিক কিছু দিইনি, পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করেছি।

প্রায় সাত বছর আগে একটি গাভি কিনে শুরু হয়েছিল আবুল কাশেমের গরু পালন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পরিণত হয়েছে ২৮টি গরুর সফল খামারে। আবুল কাশেম নিজে গোয়ালঘরে সময় দেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। পরিচর্যা, খাওয়ানো, চিকিৎসা—সবই করেন নিজ হাতে।

আবুল কাশেমের স্ত্রী সানোয়ারা খাতুন বলেছেন, বাড়িতে পালন করা একটি গাভি থেকে চার বছর আগে এই বাছুর পেয়েছিলাম। ঘরের ভেতরেই জন্ম। ওর যত্ন করেছি সন্তানের মতো। জন্মের সময় থেকেই বাছুরটির শারীরিক গঠন ভালো ছিল। কোনোদিন বাইরে বের হয়নি। এখন দরজা দিয়ে আর বের হয় না। কষ্ট হলেও দেয়াল ভেঙে বের করতে হবে।

প্রতিবেশী শফিজ উদ্দীন বলেন, কাশেম অনেক যত্নবান। পশুগুলোকে তিনি সন্তানের মতো দেখেন। খামারটাও খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যুবরাজকে বিক্রি করে ভালো দাম পেলেই তার কষ্ট স্বার্থক হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.

বাবুল হোসেন বলেছেন, পঞ্চগড় জেলায় ১১ হাজার খামার আছে। এ জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা আছে ১ লাখ ২৫ হাজারের মতো। এর বিপরীতে প্রস্তুত আছে অন্তত দেড় লাখ পশু।

তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে প্রায় ২৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থেকে যেতে পারে। এসব পশু দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। 

মো. বাবুল হোসেন বলেন, কাগজিয়া পাড়ার যুবরাজ সর্বোচ্চ সুঠাম দেহের অধিকারি। আশা করছি, কোরবানির পশুর হাটে যুবরাজ ষাঁড়ের মালিক ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট প রস ত ত ক রব ন র য বর জ

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ