ফরিদপুরের নগরকান্দায় বোনকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকের হামলা ও মারধর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ভবুকদিয়া এলাকায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষা (১৮) সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ভবুকদিয়া এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেছেন। তবে উপজেলা বিএনপির নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে খবর পেয়ে মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আসে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। তখন পুলিশ ও ছাত্রদের ওপর হামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ভবুকদিয়া এলাকায় নিজ বাড়ির পাশের রাস্তার বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বৈশাখী তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ বক্তব্যে হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেন। ওই লাইভ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বৈশাখী ইসলাম। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত। আমি একটা ইভ টিজিংয়ের কেস নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিএনপির লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করছে। আমাদের কি জুলাই আন্দোলন করা ভুল ছিল, যার কারণে রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন আমাকে মারছে? তারা আমাকে, একজন মেয়ে বলে, ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে। আমার আব্বাকে খুঁজছে মারার জন্য। আমি খুব বাজে অবস্থায় আছি। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।’

বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সময় ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও সেখানে যান। পুলিশ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক  ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে আসে।

হামলায় আহত নগরকান্দা থানা–পুলিশের গাড়ি চালক আবদুল হান্নান শরীফ (৫৬) বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমরা আসামি ধরে আনতে গেলে স্থানীয় দেড় শতাধিক লোক আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। হামলাকারীরা আমার হাত ও মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়; গাড়ির পর্দা ছিড়ে ফেলে। তবে তাঁরা আসামি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আমরা তাদের ধরে থানায় এনেছি।’

ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকা অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।  

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ভবুকদিয়া গ্রামের জালাল ব্যাপারীর ছেলে শরীফ ব্যাপারী (২১)। তাঁর বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফর আলী বলেন, হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নগরকান্দার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা করা হবে। একটি বৈশাখীর ওপর হামলার ঘটনায় নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে, একটি হবে বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এবং অপর মামলাটি হবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও প্রতিকার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএনপির এক প্রার্থী ও তাঁর ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ষাকে (বৈশাখী ইসলাম) চুল ধরে টেনে মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা আমরাই প্রতিরোধ করেছি। আমাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, ওই সমন্বয়ক (বৈশাখী) এবং যে ছেলের সঙ্গে এ ঘটনা, তাঁদের দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগরক ন দ ব এনপ র এল ক য় কর ছ ন এ ঘটন ইসল ম ঘটন র ম রধর ঘটন য় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভুয়া র‍্যাবকে ধাওয়া দেয় আসল র‍্যাব, দুই পক্ষকেই গণপিটুনি 

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া র‌্যাব সদস্যদের ধাওয়া করছিলেন আসল র‌্যাব সদস্যরা। সবাইকে মারধর করেছেন স্থানীয়রা। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, দুটি মাইক্রোবাস দ্রুত গতিতে জয় বাংলা মোড় অতিক্রম করছিল। প্রথম মাইক্রোবাস থেকে বারবার বাঁশি বাজানোর শব্দ শুনে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা মহাসড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে প্রথম মাইক্রোবাসটি থামায়। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিরা নিজেদের র‌্যাব সদস্য বলে দাবি করলেও তাদের কারো গায়ে র‌্যাবের পোশাক ছিল না। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ভুয়া র‌্যাব সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে ঘিরে ফেলে এবং মারধর করে।

এ সময় পেছন থেকে ধাওয়া করে আসা দ্বিতীয় মাইক্রোবাস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, যাতে প্রকৃত র‌্যাব সদস্যরা ছিলেন। তারাও সাদা পোশাকে থাকায় জনতা তাদের ভুয়া র‌্যাব মনে করে চড়াও হয়। উত্তেজিত জনতা প্রকৃত ও ভুয়া র‌্যাব সদস্যদের একসঙ্গে মারধর করে এবং একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে গ্রেনেড-অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক

রাজশাহীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, গ্রেপ্তার ২

খবর পেয়ে নগরকান্দা থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রকৃত র‌্যাব ও ভুয়া র‌্যাব পরিচয়দানকারীদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

জনতার হাতে আটক ভুয়া র‌্যাব সদস্যরা হলেন— শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মোহাম্মদ সুমন (৪৯), চাঁদপুর সদরের মোহাম্মদ মিন্টু (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সাইফুল (৩৪), মাদারীপুরের কালকিনির মোহাম্মদ জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মোহাম্মদ দিদার (৩৬)।

নগরকান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম বলেছেন, “জনতার হাত থেকে র‌্যাব ও ভুয়া র‌্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদেরকে শ্রীনগর থানায় নেওয়া হয়েছে।”

র‌্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, র‌্যাব-১০ এর একটি টিম ভুয়া র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত একটি দলকে ধাওয়া করছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে প্রকৃত ও ভুয়া র‌্যাব সদস্যদের একসঙ্গে পিটিয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে থাকায় এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

র‌্যাব-১০ এর মুন্সীগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা ভুয়া র‌্যাবের দলকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।” 

তিনি আরো বলেন, “জনগণ ভুয়া র‌্যাব পরিচয়দানকারীদের মারধর করছিল। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আমরাও জনতার হাতে কিছুটা মারধরের শিকার হয়েছি, তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়।”

অভিযানে ভুয়া র‌্যাব চক্রের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে চারটি ‘র‌্যাব’ লেখাসম্বলিত জ্যাকেট, তিনটি র‌্যাব ক্যাপ, দুই জোড়া হাতকড়া, একটি স্টেনগান, একটি পিস্তল সদৃশ গ্যাস লাইট, দুটি ওয়াকি-টকি সেট, একটি পিস্তল কাভার, মোবাইল ফোন এবং একটি মাইক্রোবাস। এ সময় অপহৃত দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব আধ্য (৫৩) ও বিশ্বনাথ আধ্য (৫৭) নামের সাতক্ষীরার দুই বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা র‌্যাব পরিচয়ে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

ঢাকা/তামিম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভুয়া র‍্যাবকে ধাওয়া দেয় আসল র‍্যাব, দুই পক্ষকেই গণপিটুনি