বিএনপি কমিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় চারটি পক্ষ
Published: 1st, June 2025 GMT
বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। এ কমিটির বিরুদ্ধে দলের চারটি পক্ষ সক্রিয়। তারা সব কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও মহানগর নেতারা প্রকাশ্যে কথা না বললেও শুক্রবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বিরোধিতাকারীদের ‘কুচক্রী মহল’ আখ্যা দেওয়া হয়।
এদিকে কমিটির বাইরে গিয়ে কর্মসূচি পালনকারীদের ‘কুচক্রী মহল’ আখ্যা দলের বিরোধ নতুন করে তেতে উঠেছে। শব্দটি নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন কমিটির বাইরে থাকা নেতারা। যদিও ওই বিবৃতিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
শুক্রবার রাতে জেলা (দক্ষিণ) এবং মহানগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সময়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির মধ্যে বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব থেকে বিরত না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় বিবৃতিতে। এতে স্বাক্ষর করেন মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, জেলার (দক্ষিণ) আহ্বায়ক আবুল কালাম শাহীন ও সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন।
মহানগর ও জেলা কমিটির সঙ্গে বিপরীত মেরুতে থাকা গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলাম, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন ও মহানগরের জেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। আসছেন।
সরোয়ারপন্থি হিসেবে পরিচিত মহানগরের সাবেক সহসভাপতি মহসিন মন্টু বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিবৃতিদাতারা রাজনৈতিক ভাষার ব্যবহার জানেন না। এ জন্য আমাদের কুচক্রী মহল বলেছেন।
সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদ বলেন, ‘আমরা ছাত্রদল থেকে বিএনপি হয়েছি। বিবৃতিদাতা চারজনের তিনজনেই অন্য দল থেকে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, কর্মসূচিতে আমাদের ডাকা হয় না। তাই ভিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করেছি।
বিবৃতি দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে মহানগরের সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার সমকালকে বলেন, মহানগর ও জেলার বৈধ কমিটি রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কোনো কর্মসূচি কমিটির অধীনে হবে। কমিটি উপেক্ষা করে বরিশাল বিএনপির নাম ব্যবহারকারীরা দলে বিশৃঙ্খলকারী। তাদের বিষয়ে কেন্দ্রে জানানো হবে।
জেলার সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন বলেন, কেন্দ্র থেকে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের বাইরে গিয়ে দলীয় ব্যানার ব্যবহার সমীচীন নয়। যাদের পদ নেই, তারা কি করে ব্যানারে ‘বিএনপি জেলা ও মহানগর’ লিখে কর্মসূচি করেন? কর্মীরা এসব ঘটনায় বিভ্রান্তিতে পড়ছে। জেলা ও মহানগর বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারেম্যানকে এসব বিষয়ে জানানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ কম ট র ব ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’