তাজউদ্দীন থেকে সালেহউদ্দিন: ৫৪টি বাজেট কে, কখন, কীভাবে দিলেন
Published: 2nd, June 2025 GMT
দেশের প্রথম বাজেট ছিল ছোট আকারের। আর ৫৪ বছর পর সেই বাজেটের কলেবর বড় হয়েছে, বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। যত বাজেট দেওয়া হয়েছে, তার আকার কত ছিল, কে আর কবে তা উপস্থাপন করেছিলেন, পেশ করার সময় কী বলেছিলেন, তারই একটি বিবরণ দেওয়া হলো এখানে। বলে রাখা ভালো, বাজেট উপস্থাপন পদ্ধতির অনেক বদল হয়েছে। বাজেট পরিসংখ্যান প্রকাশের পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের আয় ও ব্যয়ের খাতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির বাইরে নতুন নতুন উন্নয়ন ব্যয়ের খাত যুক্ত হয়েছে। ফলে এডিপির তুলনায় উন্নয়ন বাজেট আরও বড় হয়েছে।
১.
মুজিবনগর সরকার, ১৯ জুলাই ১৯৭১
রাজস্ব আয় ৭,৭৪, ১৮,৯৯৮ টাকা, ব্যয় ৮,৬২, ৪৮,২০৪ টাকা। বাজেট ঘাটতি ৮৮,২৯, ২০৬ টাকা।
প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার। তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এম মনসুর আলী। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর অনুমোদন দিয়েছিলেন। সেই বাজেটের ব্যাখ্যামূলক টিকায় বলা ছিল, ‘আমাদের এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতে বাজেট তৈরি করতে হচ্ছে। যেটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বাজেট জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১- এই তিন মাস সময়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আশায় এটা করা হয়েছে যে আমরা এই সময়ের মধ্যেই দেশকে স্বাধীন করতে পারব।’
২. তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭২ / ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, শনিবার, ৩০ জুন, ১৯৭২
একই সঙ্গে দুই অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছিল। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরের বাজেটের মেয়াদকাল ছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৩০ জুন, ১৯৭২।
ক.১৯৭১-৭২ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ৪৮.৫২ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৯৯.১৩ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ৫১.৪৬ কোটি টাকা
খ.১৯৭২-৭৩ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ২৯১.৫৮ কোটি, রাজস্ব ব্যয় ২১৮.৪৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৩.১৫ কোটি, উন্নয়ন, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন ব্যয় ৫০১ কোটি টাকা, এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৩১৮.৩০ কোটি টাকা।
মোট বাজেট ৭১৯.৪৩ কোটি, মোট আয় ২৮৫.৩৮ কোটি, মোট ঘাটতি ৪২৭.৮৫ কোটি টাকা।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। প্রথম বাজেট বক্তৃতা তেমন দীর্ঘ ছিল না। পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনার কথাই বেশি বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট প্রচার না করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে আমি সুখী হতাম। তবে আমি আশা করি যে এর পরে আর কোনো দিন এইভাবে আমাদের বাজেট প্রচার করতে হবে না।’
তাজউদ্দীন আহমদউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম ব জ ট ত জউদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয়ের আশানুরূপ প্রতিফলন নেই
এ টি এম মা’ছুম
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল
জামায়াতে ইসলামী
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগের বাজেটগুলোর মতোই গতানুগতিক। এবার বাজেটে ব্যয় না বাড়লেও তেমন কোনো ব্যয় কমেওনি। এতে কোনো নতুনত্বের ছোঁয়া নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বাজেটে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় আশানুরূপ প্রতিফলিত হয়নি।
বাজেটে বড় অঙ্কের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরেও এর কাছাকাছি অর্জন করা সম্ভব হয়নি, যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করছি। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট বাড়িয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার একটি বড় অংশ আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। বাজেটে বিদেশনির্ভরতা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আশা করি, সরকার ঘোষিত বাজেটকে গণমুখী করার জন্য আয়কর আরও কমিয়ে এনে জনকল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়াবে।