যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া নতুন পরমাণু চুক্তি প্রস্তাবে ‘অনেক অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। মঙ্গলবার (৩ জুন) লেবানন সফরকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি অনুষ্ঠানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্প্রতি আমরা যে লিখিত প্রস্তাব পেয়েছি, তাতে অনেক অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রস্তাবের অনেক বিষয় স্পষ্ট নয়।”

ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনায় ইরানের আলোচক দলের নেতৃত্বদানকারী আরাঘচি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো আপস করবে না। তিনি বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এখন ইরানিদের জন্য জাতীয় গর্ব এবং সম্মানের বিষয় হয়ে উঠেছে।”

আরো পড়ুন:

ইরানের কাছে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি অস্বীকার ইরানের

এর আগে সোমবার (২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির অধীনে ইরানকে কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, “ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়া আমাদের রেড লাইন।” ইরান তার ‘নীতিগত অবস্থান এবং ইরানের জনগণের স্বার্থের’ ভিত্তিতে আগামী দিনে এই প্রস্তাবের জবাব দেবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি আরো বলেন, “আমরা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারো অনুমতি চাইব না। তবে এই সমৃদ্ধকরণ যাতে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের দিকে না নিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা করে আসছে। ওমানের মধ্যস্থতায় দুই শক্তির মধ্যে এপ্রিল মাস থেকে আলোচনা চলছে। ওমান এবং ইতালিতে এরই মধ্যে পাঁচটি বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিরা। দেশ দুটির মধ্যে ষষ্ঠ দফায় পরোক্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, তবে এর স্থান এখনও স্পষ্ট নয়।

দুই পক্ষই আলোচনা নিয়ে আশাবাদী হলেও মূল বিতর্ক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার নিয়ে।যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এর আগে বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো ফলাফল আশা করেন না।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তেহরান উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়েছে। দেশটি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উৎপাদন বাড়িয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশ স্তরের কাছাকাছি।

ইরান প্রতিবেদনটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে ‘শান্তিপূর্ণ ‍উদ্দেশ্যে’ বলে দাবি করেছে। 

ট্রাম্প কিছুদিন আগে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আলোচনা যদি চুক্তি অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র ইউর ন য় ম প রস ত ব ইউর ন য র জন য পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।

এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫

গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প