লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
Published: 9th, June 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলাটি করেন নিহত কাউছারের স্ত্রী শিল্পী বেগম।
মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রিয়াজ হোসেনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি ১১ জন বিএনপির কর্মী।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। শহরের সামাদ মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এর আগে দলটির নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হন।
জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবী বলেন, ‘বিএনপির কয়েকজন কর্মীর হামলায় কাউছার আহমেদ মারা গেছেন।’
অন্যদিকে এ ঘটনার বিষয়ে আজ সকাল ১০টায় শহরের গোডাউন রোডের বশির ভিলা হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। সেখানে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘একটি স্থানীয় ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। মারামারির পর কাউছার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসকদের ধারণা, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। সুরতহাল রিপোর্টেও তেমনটা উল্লেখ রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার আগেই বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা ঠিক হয়নি।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার রাজীবপুর এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রিয়াজ হোসেন ও বিএনপির কর্মী সোহাগ ও তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে জামায়াত নেতা কাউছারের ভাই আলতাফ হোসেনের মারামারির ঘটনা ঘটে। তখন কাউছারসহ তাঁর পরিবারের চারজন আহত হন। পরে তাঁরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
পরিবারের অভিযোগ, বিকেলে কাউছার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। নিহত কাউছার আহমেদ বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন জামায়াতের ওলামা বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতিও করতেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্ববিরোধের জেরে ৫ জুন দুপুরে রাজীবপুর এলাকায় বাদীর বাড়ির সামনে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। প্রথমে কাউছারের ভাইয়ের ওপর হামলা হয়। পরে কাউছার তাঁকে রক্ষা করতে গেলে তাঁর মাথার পেছনে রড দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে আরও মারধর করা হয়।
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে সদরের গোডাউন রোড এলাকার একটি মিলনায়তনে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র ব এনপ র কর ম র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে দুজনেরই মৃত্যু
ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সে। সেই সুযোগে সাঁতার শিখতে নেমেছিল পুকুরে, শেখাচ্ছিলেন বাবা। একপর্যায়ে মেয়ে ডুবে গেলে রক্ষা করার চেষ্টা করেন বাবা। এ সময় দুজনই ডুবে মারা যান।
আজ সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত দুজন হলেন হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) ও তাঁর মেয়ে হালিমা মোহাম্মদ (১৭)। হালিমা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার তার অংশগ্রহণের কথা ছিল।
স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আহমদের স্ত্রী তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাঁদের চার সন্তান সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। বাড়ির কাছে মানিকসিংহ এলাকায় বাবুলের একটি ইটভাটা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চার-পাঁচ দিন আগে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। তাঁর সন্তানেরা সাঁতার জানে না। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে মেয়ে হালিমাকে নিয়ে পুকুরে নেমে প্লাস্টিকের টিউবের সাহায্যে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবুল। একপর্যায়ে টিউব থেকে হাত ফসকে হালিমা পানিতে ডুবে যায়। এ সময় বাবুল মেয়েকে রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুজনই পানি থেকে উঠছিলেন না। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে পুকুরে নেমে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। পরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
বিকেল পাঁচটার দিকে বাবুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আলাদা দুটি কক্ষে বাবা-মেয়ের লাশ রাখা। লাশের পাশে বসে স্বজনেরা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাবুলদের আত্মীয় ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজাদ মিয়া জানান, আজ রাত ১০টায় বাবুল ও তাঁর মেয়ের জানাজা হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হবে।