অপরিকল্পিত উন্নয়নের বাঁধে ডুবছে খুলনা
Published: 19th, June 2025 GMT
খুলনা নগরীর লবণচরা, বান্দাবাজার, মতিয়াখালী, শিপইয়ার্ড ও টুটপাড়ার একাংশের পানি নিষ্কাশন হয় লবণচরা, ক্ষেত্রখালী ও মতিয়াখালী খাল দিয়ে। গত এক বছর ধরে খাল তিনটির মুখে বাঁধ দিয়ে সেতু ও স্লুইসগেট নির্মাণ করছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। গত সোমবার শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতে পারেনি। ফলে বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
নগরী নিরালা ও প্রান্তিক আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের পানি নিষ্কাশন হয় নিরালা খাল দিয়ে। প্রায় এক বছর ধরে ওই খালে বাঁধ দিয়ে সেতু নির্মাণ করছে কেডিএ। ভরাট অংশের ভেতরে বেশ কয়েকটি পাইপ দেওয়া হলেও সেই পাইপ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হয় না।
শুধু এই তিনটি খাল নয়; নগরীর ভেতরে সেতু, স্লুইসগেট, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে আরও ১০টি ড্রেন। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খানজাহান আলী রোডের ৪ নম্বর ড্রেনের এক কিলোমিটারে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তিনটি। অস্থায়ীভাবে তৈরি এসব বাঁধ সময়মতো অপসারণ না করায় বৃষ্টির পানি নামতে পারেনি। ফলে গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ডুবছে নগরীর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা। বুধবার তুলনামূলক কম বৃষ্টি হলেও বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে ছিল।
নগরীর ডাকবাংলো, রয়েল ও পিটিআই মোড়সহ আশপাশ এলাকার পানি খানজাহান আলী সড়কের পাশে ৪ নম্বর ড্রেন দিয়ে রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। ওই ড্রেনটি পুনর্নির্মাণ করছে কেসিসি। কংক্রিটের ঢালাই সম্পন্ন করতে ড্রেনের মাঝে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়। কাজ শেষে বাঁধ অপসারণের নির্দেশনা ছিল। ঠিকাদার ওই নির্দেশ মানেননি।
মঙ্গলবার বিকেলে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৪ নম্বর ড্রেনের পিটিআই মোড়, টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের মোড় এবং কবরখানার সামনে এক কিলোমিটারের ভেতরে তিনটি বাঁধ রয়েছে। এতে পিটিআই, রয়েল মোড়, ডাকবাংলো মোড়ে পানি আটকে গেছে। পরে বাঁধগুলো অপসারণ করে কেসিসি। একই অবস্থা দেখা গেছে মোংলাবন্দর আবাসিক এলাকার ভেতরে বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ড্রেনে। এসব ড্রেনের বাঁধ অপসারণ করা হয়নি।
কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে দেরি হয়েছে। বুধবার দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে মতিয়াখালী ও ক্ষেত্রখালী খালের পেড়িমাটি ও বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কাটা ও পানি নিষ্কাশনে প্রকৌশল বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, নগরীর ভেতরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কিছু খাল ও ড্রেন বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কেডিএ। ফলে বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বুধবার পাঁচটি খাল থেকে বাঁধ অপসারণের জন্য কেডিএকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে হয়বরল অবস্থা
পানি নিষ্কাশন, খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের। এ বিভাগটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রায় সবক’টি পদই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য। এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহানকে। প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন।
অবশ্য কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধান পদ ফাঁকা থাকায় কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এই বিভাগে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সবাই অভিজ্ঞ। বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার কাজ এগিয়ে নিতে আমরা ৩টি মোবাইল টিম গঠন করেছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র ভ তর এল ক র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি
খুলনা মহানগরীর লবণচরার বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বিদ্যুৎ (২৪) হত্যা মামলার বিচার কাজ এক যুগ অতিবাহিত হলেও এখনো শেষ হয়নি। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন নিহতের পরিবারকে। তাদের বিরুদ্ধে বাদীর অপর ছেলেকে হত্যার ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।
এ অবস্থায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা এবং আসামিদের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন নিহত বিদ্যুতের মা জাহানারা বেগম। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আরো পড়ুন:
কেএমপির ৮ থানার ওসি রদবদল
জলবায়ু পরিবর্তন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ইইউ রাষ্ট্রদূত
লিখিত বক্তব্যে জাহানারা বেগম বলেন, “২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ওরফে বিদ্যুৎকে (২৪) নগরীর খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ৭ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করি (মামল নং- ০৩)। মামলাটি বর্তমানে খুলনা মহানগর দায়রা জজ (মামলা নং: ৪৪৯/১৫) বিচারাধীন আছে।”
“মামলায় লবণচরা বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার নাজিম খলিফার দুই ছেলে আরমান খলিফা ও আরিফ খলিফা, লবণচরা মোহাম্মদীয়া পাড়া মসজিদ এলাকার আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার, লবণচরা ইব্রাহীমিয়া মাদরাসা রোড এলাকার হামিদ মিস্ত্রীর ছেলে মো. সিরাজ এবং লবণচরা মোক্তার হোসেন রোড এলাকার হযরত আলী ফকিরের ছেলে বাদল ফকিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এই সব আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় বিভিন্ন মামলাও রয়েছে”, যোগ করেন তিনি।
জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করেও সন্ত্রাসীরা ক্ষ্যান্ত হয়নি। উপরন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা এখন মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার এক মাত্র সন্তান এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবননাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার ফলে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় তারা আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “হত্যাকারী-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি এখন পর্যন্ত খুলনা ও লবণচরা থানায় চারটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সর্বশেষ গত ৩ মার্চও আমি লবণচরা থানায় জিডি করি। কারণ ২ মার্চ দুপুরে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি আরমান তার ভাই আরিফ এবং অপর আসামি জুয়েল শেখ, হারুন হাওলাদার, সিরাজ ও বাদল ফকিরসহ আরো অনেকে আমার বাসার সামনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমাকে ও আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবকেও হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেয়। এ ছাড়া, একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে আমি ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ২ মে খুলনা থানায় এবং একই বছরের ৪ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়রি করি।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ