গাজার ব্যাপারে উদাসীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: গুতেরেস
Published: 25th, July 2025 GMT
গাজায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ বন্ধ করে রাখার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস । তিনি এটিকে ‘বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করার নৈতিক সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন। শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্ব সম্মেলনে ভিডিও লিংকে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন।
গুতেরেস বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই যে মাত্রার উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা, সহানুভূতির অভাব, সত্যের অভাব, মানবতার অভাব দেখাচ্ছেন তা আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না। এটি কেবল একটি মানবিক সংকট নয়। এটি একটি নৈতিক সংকট যা বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা প্রতিটি সুযোগে কথা বলতে থাকব।”
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিক গ্রুপ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের ত্রাণ অবরোধ গাজাকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ এবং প্রাণহানির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংস্থাটি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকার এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরায়েলকে অবিলম্বে তার অবরোধ শেষ করতে হবে। প্রতিটি ট্রাক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ক্যালোরি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গেট খোলা কেবল সূচনা: শুধুমাত্র একটি যুদ্ধবিরতি গাজায় মানবিক বিপর্যয় কমাতে পারে।”
গত মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজার খাদ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাসপাতালে অপুষ্টির শিকার হাড্ডি-চর্মস্বার শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যে উপত্যকায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান