পতনের আগের রাতেও দমনের চেষ্টায় ছিলেন শেখ হাসিনা
Published: 5th, August 2025 GMT
সরকার পতনের আগের রাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শেখ হাসিনার কাছে খবর পাঠানো হচ্ছিল, পরদিন ৫ আগস্ট লাখ লাখ মানুষ ঢাকার রাজপথে নেমে আসবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর থাকবে না, এমন ইঙ্গিতও ছিল গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে। পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আসন্ন পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে ছিলেন অনড়। তিনি আরও রক্তপাত ঘটিয়ে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাহিনীগুলোকে চাপ দেন। ৪ আগস্ট অনেক রাত পর্যন্ত তিনি আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ব্যবহারের চেষ্টায় ছিলেন।
পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) জবানবন্দি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং গণভবনে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে গত বছর ৪ ও ৫ আগস্টের শেখ হাসিনার কার্যক্রম ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতনের সব ধরনের বাস্তবতা থাকার পরেও শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চাননি। বরং আগের দিন এ প্রসঙ্গ ওঠায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তিনি। দেশ ছেড়ে পালানোর আগের রাতেও বলেছিলেন, যেকোনোভাবেই হোক আন্দোলন দমন করতে হবে।
কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে ছিলেন অনড়। তিনি আরও রক্তপাত ঘটিয়ে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাহিনীগুলোকে চাপ দেন। ৪ আগস্ট অনেক রাত পর্যন্ত তিনি আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ব্যবহারের চেষ্টায় ছিলেন।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন ৪ আগস্টকে ‘ভয়ংকর ও উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক শুনানিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে। সরকার তার দুর্বলতা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। এই মিটিংয়ে থাকা অবস্থায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে ও বিভিন্ন স্থানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বৈঠক মুলতবি হয়।তৎকালীন আইজিপি ও বর্তমানে কারাবন্দী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দিতৎকালীন আইজিপি ও বর্তমানে কারাবন্দী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে বলেছেন, ৪ আগস্ট দিনে ও রাতে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গণভবনে শেখ হাসিনা দুই দফা বৈঠক করেছিলেন। এর মধ্যে বেলা ১১টায় আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজে, তিন বাহিনীর প্রধান, তৎকালীন আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়। আন্দোলন পরিস্থিতি এবং তা দমন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বলা হয়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসেছে আন্দোলন গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে। তা দমন করা প্রয়োজন।
সাবেক এই আইজিপি জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে। সরকার তার দুর্বলতা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। এই মিটিংয়ে থাকা অবস্থায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে ও বিভিন্ন স্থানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বৈঠক মুলতবি হয়।’
পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) জবানবন্দি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং গণভবনে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে গত বছর ৪ ও ৫ আগস্টের শেখ হাসিনার কার্যক্রম ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনার পলায়নের দৃশ্য। ৫ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ন র আগ র পর স থ ত তৎক ল ন ৫ আগস ট ৪ আগস ট আইজ প পতন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান
আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।
নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪