যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে
Published: 14th, January 2025 GMT
অস্ত্রের মুখে সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে এক যুবককে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। অপহরণের প্রায় ৫ ঘণ্টা পর অপহৃত যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ।
অভিযুক্তরা হলেন- চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার-সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম।
আরো পড়ুন:
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচ
সমাপনী কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি ৪৮০ জনের, অনশনে ৩২১
কক্সবাজারে সাবেক কাউন্সিলর হত্যা: আরো ৩ জন গ্রেপ্তার
ভুক্তভোগী সোহাগ সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেনের তোফাইয়ের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দুই-একদিনের মধ্যে তাকে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। সোমবার রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহাগ। এ সময় ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম সেখানে এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এসময় বাধা দিতে গেলে তার চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শটগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ভোর ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা ও পুলিশ রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করে সোহাগকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে বলেন। এরপর কুতুব উদ্দিন ও মোতাইকে আমি ফোন দিয়ে তাকে (সোহাগ) দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসতে অনুরোধ করি। তখন মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে যে, ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বল, তারপর সোহাগকে ছেড়ে দিচ্ছি।
ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় এলাকার কুতুব উদ্দিন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে ও মুক্তিপণ দাবি করে। ভোর ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মায়া খাতুন বলেন, “১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি, এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শটগান দিয়ে প্রথমে তাকে আঘাত করে। পরে গুলি করে। এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। এখন কিভাবে কি করব দিশেহারা হয়ে গেছি।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে, সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, “৫ আগস্টের আগে ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার-সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আমার সঙ্গে চলত ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।”
পাবনা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সদর উপজেলা যুবদলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে গেলে চাপের মুখে সোহাগকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। পালিয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে।
পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।