পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিল নেত্রকোনার স্কুলছাত্রী মুনা আক্তার (১৫)। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারাতে হলো তাকে।

মুনা আক্তার নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদমশ্রী এলাকার সনু মিয়া ও মিনা আক্তার দম্পতির একমাত্র মেয়ে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। আজ সোমবার ভোরে তার লাশ গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে সবাই শোকার্ত হয়ে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, মুনা কদমশ্রী এ ইউ খান উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। কিছুদিন আগে পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে ঢাকায় চলে যায়। পরে পরিচিত এক তরুণের মাধ্যমে মিরপুরের রূপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। গত মঙ্গলবার কারখানার কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় সে।

মুনার খালাতো ভাই মদন হাজি আবদুল আজিজ খান সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বারী হিরা আকন্দ বলেন, ‘মুনা অভিমান করে বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে যায়। আমরা তার সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, কেমিক্যাল গুদামে লাগা আগুনে অন্যদের সঙ্গে সে পুড়ে মারা গেছে। গতকাল রোববার রাতে ডিএনএ পরীক্ষায় পরিচয় নিশ্চিত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ আনা হয়েছে। আজ সকাল আটটায় গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।’

মুনার বড় ভাই আলী আহসান বলেন, ‘মুনা আমাদের একমাত্র বোন ছিল। সে অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। তাকে কীভাবে ওই কারখানায় চাকরি দেওয়া হলো? আমরা এর বিচার চাই।’

ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জনের মরদেহ শনাক্তের পর গতকাল রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চারজনের বাড়ি নেত্রকোনায়। মুনা আক্তার ছাড়াও বারহাট্টা উপজেলার নুরুল্লাহরচর গ্রামের জয় মিয়া (২১), মোহনগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামের তোফায়েল আহমেদ (১৮) ও একই উপজেলার সাউথখালী গ্রামের আসমা আক্তার (১৪)। নিহত জয় মিয়ার স্ত্রী মারজিয়া সুলতানা (১৮) এখনো নিখোঁজ বলে জানিয়েছে পরিবার।

জয় মিয়ার বাবা সবুজ মিয়া বলেন, চার মাস আগে তাঁর ছেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সুলতান মিয়ার মেয়ে মারজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করেন। তিন সপ্তাহ আগে দুজনই ঢাকায় যান এবং একই কারখানায় চাকরি নেন। আগুনে দুজনই প্রাণ হারান। সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমার সব শেষ হইয়া গেছে। বাড়ি থেকে ঢাহা যাওনের সময় ছেলে কইছিল, আব্বা, কোনো চিন্তুা কইরো না। সামনের মাস ছুডি লইয়া আইবাম। দুজনে চাকরি করলে টেহাপয়সার অভাব থাকত না। অহন আমার সব শেষ হইয়া গেল। ছেলের লাশ পাইলেও বউমার লাশের অহনও হদিস পাইতাছি না।’

মারজিয়ার বাবা সুলতান মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার একটাই মেয়ে। চার মাস আগে মেয়েডারে বিয়া দিছিলাম। আমি ঢাহা যাইতে তারারে না করছিলাম। এই ঢাহা শহরে কয়েক দিন পরে পরে দুর্ঘটনায় মানুষ মরে। কিন্তু মেয়ে আমারে বুঝাইয়া কইছে চিন্তা না করতে। তারা নিরাপদে থাকব। কারখানার কাছেই বাসা ভাড়া নিছিল। জামাইয়ের লাশ পাইলেও মেয়ের লাশটা অহনও পাইতাছি না।’

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুরে আগুনে কারখানায় মারা যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে নেত্রকোনার চারজনের লাশের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ত রক ন পর ব র র উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই, নারীসহ দুই যুবককে গণপিটুনি

ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক তরুন ও এক  তরুনীকে ভুইগড় থেকে ফতুল্লার দাপা বালুর মাঠ এলাকায় নিয়ে এসে মোবাইল  ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শামীমা খানম নামের  এক নারীসহ দুই  যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ সময় আটককৃতদের নিকট থেকে পুলিশ বিশেষ পেশার (সাংবাদিক) কার্ড উদ্ধার সহ ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত নয়টার দিকে ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাকপুর সাহারা সিটি বালুর মাঠে।

এঘটনায় ভুক্তভুগী যুবক ইব্রাহিম নিঝুম বাদী  হয়ে শামিমা খানুলম সনিয়া (৪০), তৌছিফ আহম্মেদ (২০) ও  সিয়াম আহম্মেদ (২০)  ও  সোহাগ (২৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। অভিযুক্ত  অপর আসামী সোহাগ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

মামলায় উল্লেখ্য করা হয়, মামলার বাদী শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার বান্ধবী (১৮) কে নিয়ে একটি রিকশা যোগে ভূইগড় রুপায়ন টাউন এর সামনে থেকে চাষাড়া যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডস্থ ভূইগড় রুপায়ন টাউনের সামনের রাস্তায় পৌছামাত্র অভিযুক্ত আসামীরা  রিক্সার গতিরোধ করে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে একটি অটোতে উঠিয়ে ফতুল্লা থানা সীমান্তের দাপা ইদ্রাকপুরস্থ সাহারা সিটি বালুর মাঠে নিয়ে  আসে। 

পরবর্তীতে অভিযুক্তরা বাদী সহ তার বান্ধবীকে ছেড়ে দেওয়ার শর্ত স্বাপেক্ষ ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে অভিযুক্ত আসামীরা তাদের কে মারধর করে এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা বাদী ও তার বান্ধবীর বাবার নিকট থেকে মোবাইল ফোনে পৃথক পৃথক ভাবে মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ টাকা করে দাবী করে এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্তলে ছুটে আসে। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তরুন-তরুনীর নিকট বিস্তারিত জানতে পেরে আটককৃতদের তল্লাশি করে লুটে নেওয়া মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড উদ্ধার করে গণপিটুনি দিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী কথিত সাংবাদিক শামীমা খানম সোনিয়া তৌছিফ আহম্মেদ ও  সিয়াম আহম্মেদ কে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে এ সময় কৌশলে পালিয়ে যায়  অভিযুক্ত অপরজন সোহাগ। 

তথ্যমতে, এক মাস পূর্বে পঞ্চবটী রুসেন হাউজিং ভিতরের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে পতিতা ব্যবসার অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবী করে। সে সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয়। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।

এরপর এই চক্রটি পাগলার চিতাশাল, তল্লা কোর্টের পেছনে, পোস্ট অফিস রোডের দারোগার বিল্ডিংয়ে  গিয়ে একই কায়দায় চাঁদা দাবী করে। সে সকল ঘটনাতেও তারা স্থানীয়বাসীর প্রতিরোধের স্বিকার হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসে।

অপর একটি সূত্র জানায় ১৫/২০ দিন পূর্বে পঞ্চবটী হরিহর পাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে এক দম্পত্তিকে মারধর এক ভরি ওজনের স্বর্ণালংকারসহ নগদ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। 

স্থানীয় সাংবাদিক মহল শামীমা ও তার সহোযোগিদের কর্মকান্ড নিয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষুদ্ধ। তারা ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনকে শামীমা ও তার সহোযোগিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।

শামীমা খানম সোনিয়া ও তার সহোযোগিদের আটকের সংবাদে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতেই পুলিশ কর্মকর্তা কে রগ কাটার এবং  মামলা দিয়ে হয়রানী করার হুমকি প্রদান করার পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা হতবিহ্বল হয়ে পরে।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে ইব্রাহিম নিঝুম একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ