‘আমরা বিছিন্ন হতে চাই না, আমাদেরকে বিছিন্ন করে রাখা হয়েছে’
Published: 16th, January 2025 GMT
‘শান্তিপূর্ণ অধিকার আদায় আন্দোলনে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। রাষ্ট্র এখানে দায় এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রের সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ আদিবাসীদেরকে বিছিন্ন করে রেখেছে। আমরা বিছিন্ন হতে চাই না, আমাদেরকে বিছিন্ন করে রাখা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে বান্দরবানে আদিবাসী ছাত্র জনতার এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের সদস্য কর্তৃক নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রী প্রতিনিধি লাবনী তঞ্চঙ্গ্যা এ কথা বলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের সদস্যদের একতরফা দাবির প্রেক্ষিতে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্রের পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করেছে। কতৃর্পক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং বাতিলকৃত গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে আদিবাসী ছাত্র জনতা গতকাল ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয়।
‘এর পরপরই বিশেষ মহলের উস্কানিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সংগঠনটি একই জায়গায় এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওৎপেতে থাকা জাতীয় পতাকা বাঁধা ক্রিকেট স্ট্যাম্প, লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং পুলিশের বাধার মুখে পড়ে আদিবাসী ছাত্র জনতার মিছিলটি। পরে মিছিলটি সেখানে কিছুক্ষণ স্লোগানরত অবস্থায় থাকা সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে জড়ো হওয়া মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা আদিবাসী ছাত্রজনতার উপর অতর্কিতে হামলা করে। এতে ১০-১৫ জন আহত হয়।”বান্দরবান রাজার মাঠ হয়ে উজানী পাড়া-মধ্যম পাড়া ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী লেলুং খুমী, বান্দরবান দুর্নীতি দমন কমিশনের সভাপতি অংচমং মার্মা, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইংউ নিনি, ছাত্র প্রতিনিধি হ্লামংসিং মার্মা, জন ত্রিপুরা, চুংইয়োই ম্রো ও উলিচিং মার্মা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/চাইমং/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন এনস ট ব
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত