বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। একই কারণে প্রতিবছর ৯ লাখ মায়ের অকাল প্রসব হচ্ছে এবং প্রায় ৭ লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করছে। আর এ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে প্রতিবছর ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন, যার ফলে সম্মিলিতভাবে বছরে ২৬৩ মিলিয়ন কর্মদিবস হারাচ্ছেন। সেন্টার ফর রিসার্চ অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে সিআরইএ ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে `বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব‘ শীর্ষক আলোচনায় এই গবেষণা প্রকাশ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় স্থান হয়েছে বাংলাদেশের। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম; যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস হচ্ছে। ২০১৯ সালে সার্বিকভাবে এই ব্যয়গুলো ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ।

এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি। বাতাসের এমন চরম দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। বিভিন্ন বয়সীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবার পাশাপাশি ৫ বছর কম বয়সী শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বায়ুদূষণের প্রভাবে উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যেই ২০২২ সালে সরকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলি কণার জাতীয় মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল; যা গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টির পাশাপাশি বায়ুর মান অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলেও মনে করছেন গবেষকরা।

সিআরইসিএ-এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ুমানের মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) পূরণ করা সম্ভব হলেও তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এতে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ, আয়ুষ্কাল জনিত সমস্যা ২১ শতাংশ এবং অক্ষমতার সাথে বসবাস করা বছর ১২ শতাংশ কমতে পারে।

এ ছাড়া ডব্লিউএইচও-এর ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। যা প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করবে। সেইসঙ্গে হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট প্রায় সমস্ত জরুরি চিকিৎসক ভিজিট, অকাল প্রসব এবং বার্ষিক ২৬৩ মিলিয়ন কর্মদিবস অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো যাবে।

সুপারিশ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে নিজস্ব জাতীয় নির্দেশিকা মেনে চলার পাশাপাশি তা প্রয়োগ করতে হবে। মাঝারি মেয়াদে ২০০৫ সালে ডব্লিউএইচও এর নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসাবে ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা উচিত।

কয়লা ও ডিজেলের মত কার্বণ নিঃসরণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করা উচিত। এছাড়া ক্লিন পরিবহন ব্যবস্থা ও শিল্প সম্প্রসারণ দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কঠোর শিল্প নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যানবাহন এবং কলকারখানার নির্গমন মান বাড়াতে হবে। ভূমিভিত্তিক এবং স্যাটেলাইট ডেটা একত্রিত করে জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো তৈরি করতে হবে, স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ধারণে সহায়ক হবে।

সিআরইএ এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক এবং প্রধান লেখক ড্যানিয়েল নেসান বলেছেন, বিভিন্ন বায়ু মানের মানদণ্ড, বাংলাদেশের বর্তমান মান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও এর নির্দেশিকা তুলনা করে দেখা গেছে যে, পিএম ২.

৫ স্তরে সামান্য উন্নতিও জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ু দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

সিআরইএ এর বায়ু মান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, বাংলাদেশের বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার অপরিণত শিশু, কম ওজনের শিশুর জন্ম এবং শিশু মৃত্যু ঘটছে। এই পরিস্থিতি এমন হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা সবচেয়ে অরক্ষিতদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। দূষণ প্রতি বছর প্রায় ২৬৬ মিলিয়ন কর্মদিবসের ক্ষতি সৃষ্টি করে, যা উৎপাদনশীলতার বড় ধরনের ক্ষতি করে ব্যবসা ও পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশের বায়ু দূষণ সমস্যার সমাধান জনস্বাস্থ্য এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সমতুল্য।

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা শুধু মানুষের শরীরেই প্রভাব ফেলছে না, বরং বিপর্যস্ত করে তুলছে মানসিক স্বাস্থ্যকেও। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৪ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর মানুষের গড় আয়ু ২ দশমিক ৭ বছর হ্রাস পেয়েছে। তবে উক্ত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে নাগরিকদের গড় আয়ু হ্রাস পেয়েছে ৪ দশমিক ৮ বছর।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫’ নামের একটি শিক্ষাবৃত্তি। এর আওতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহায়তা পাবেন। এ বৃত্তির আবেদন শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে, বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠাতে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের শিক্ষার্থীকে বিবেচনায় নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়বেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়বেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এই বৃত্তি পেতে আবেদন করতে হবে কলেজের মাধ্যমে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পোর্টালে লগইন করে ‘শিক্ষাবৃত্তি তথ্যছক’ অপশনে গিয়ে তথ্য আপলোড করতে হবে।

আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে১ ঘণ্টা আগে

শিক্ষাবৃত্তির জন্য স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ও স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত যেসব নিয়মিত শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবেন, তাঁদের তালিকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ (তৃতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (অনার্সের ফলাফলের ভিত্তিতে) শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুনকমনওয়েলথ ফেলোশিপে আবেদনের সুযোগ, মাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সঙ্গে নানা সুবিধা৪ ঘণ্টা আগে

বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন ও যাচাই-বাছাই কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিক্ষাবৃত্তির নিয়মাবলি ওয়েবসাইটের কলেজ পোর্টালের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ অপশনে পাওয়া যাবে।

এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে মিয়ানমারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
  • ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে