নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। সংস্কার কার্যক্রম চলমান। প্রধান উপদেষ্টা যেমন বলেছেন- চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে যেকোনো সময় দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই টাইম ঠিক করে নির্বাচন।

মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় তথ্যসংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন যদি স্বচ্ছ পাত্র উপহার দিতে পারি তাহলে সেই পাত্রে যেই পানি দেন না কেন পানি স্বচ্ছ রং ধারণ করবে। আমরা পূর্বের বাস্তবতা থেকে সতর্ক আছি। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেভাবে কাজ করছি।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিদেশি কিছু নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে এ দেশের নাগরিক সাজতে চায়। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আরও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের কিছু লোক এসে বাংলাদেশের নাগরিক সাজতে চায়। এদের প্রতিহত করতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে খচড়া হয়ে ২ মার্চে গিয়ে চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়ে যাবে। ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করা হবে। ভুয়া ভোটার তালিকা, মৃত ভোটারদের উপস্থিতি, বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি, দ্বৈত ভোটারদের উপস্থিতি, এগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্যই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। কোনও অভিযোগ যাতে না আসে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে আগামীতে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নহীন নির্বাচন করার। এ ধরনের নির্বাচনের প্রথম শর্তই হচ্ছে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটার তালিকা। আগামীতে আর বাড়ি বাড়ি ভোটার করার কাজ নাও হতে পারে। কারণ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। ঘরে বসেও ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংস্কার কার্যক্রম চলমান। জেলা উপজেলাসহ নির্বাচন পরিচালনায় সব ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে। এ সময় তিনি ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকারী, সুপারভাইজারদের বিভিন্ন দিক নিদের্শনামূলক পরামর্শ দেন।

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপস থ ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে একজনের ফাঁসি কার্যকর

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দেশটির বিচার বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইরানের বার্তা সংস্থা মিজানে প্রকাশিত বিচার বিভাগের ঘোষণায় বলা হয়, গতকাল বুধবার সকালে মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নামের ওই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই বছর ধরে লাঙ্গারনেশিন মোসাদকে ‘ব্যাপক লজিস্টিক, প্রযুক্তিগত এবং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত সহায়তা’ দিয়ে আসছিলেন।

লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ওঠা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হলো, তিনি ২০২২ সালের মে মাসে ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কর্নেল সাইয়াদ খোদায়িকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন তেহরানে নিজ বাড়ির দিকে ফিরছিলেন কর্নেল খোদায়ি। ওই সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা বন্দুকধারীরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।

মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কর্নেল খোদায়ির হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল।

মিজানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খোদায়ির গতিবিধি নজরে রাখার জন্য মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নিজে একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। তিনি সেই মোটরসাইকেলের মাধ্যমে নজরদারি চালাতেন এবং সব তথ্য মোসাদকে সরবরাহ করতেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন।

শুধু তা–ই নয়, লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিল্প এলাকা ইস্পাহানে হামলায় সহায়তার অভিযোগও আনা হয়েছে।

ইরান সরকারের দাবি, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে তাদের হাতে গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ রয়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ করে যে লাঙ্গারনেশিন এসব অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। লাঙ্গারনেশিন নিজেই তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করেছে ইরান সরকার।

তবে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) প্রধান মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ‘লাঙ্গারনেশিনকে সম্পূর্ণ একতরফা ও অনৈতিক বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। নির্যাতন করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।’

বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষের মৃত্যুদণ্ডযন্ত্র প্রতিনিয়ত বেগবান হয়ে উঠছে—আরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’

এসব মৃত্যুদণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আবদুর রহমান বোরুমান্দ সেন্টার লাঙ্গারনেশিনের মামলাটি নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। সংগঠনটি বলছে, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনকে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গ্রেপ্তারের পর বিচারক আবুলঘাসেম সালাভাতির নেতৃত্বে তেহরানের একটি রেভল্যুশনারি কোর্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারক সালাভাতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আছে। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার জন্য তাঁর কুখ্যাতি রয়েছে।

বোরুমান্দ সেন্টার আরও বলেছে, লাঙ্গারনেশিন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল দাবি করেছিলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী নাজানিন বনিয়াদি লিখেছেন, ‘রক্তপিপাসু ইসলামি প্রজাতন্ত্র আবারও একজন নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসি দিল।’

ইসরায়েলের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইরান এর আগেও মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেক মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চালানো নাশকতা ও গুপ্তহত্যার চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনজন পুরুষ ও একজন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

লাঙ্গারনেশিনের মৃত্যুদণ্ড এমন সময়ে কার্যকর করা হলো, যখন কিনা ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি অভিযোগ করেছেন, এই আলোচনার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে ইসরায়েল সচেতনভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তেহরানের তথ্যমতে, আগামী শনিবার রোম শহরে ওমানের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চতুর্থ দফার পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ