জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সুযোগ পাচ্ছেন না ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে? তামিম ইকবালের কোর্টে এই প্রশ্নটা যেত-ই। প্রস্তুত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা তামিম উত্তর দিলেন সপাটে।

শান্ত ফরচুন বরিশালের একাদশে জায়গা হারিয়েছেন। শেষ ৬ ম‌্যাচে ছিলেন না একাদশে। মাঝে দুই ম‌্যাচে তাকে বরিশাল খেলিয়েছিল উইকেট কিপার হিসেবে। জাতীয় দলের অধিনায়ক ৫ ম‌্যাচে রান করেছেন মাত্র ৫৬। সর্বোচ্চ ৪১। বাকি চারটিতেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। তার ফর্ম নিয়ে রীতিমত হচ্ছে প্রবল সমালোচনা। তবে ফর্মের কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়নি বলেই জানালেন বরিশালের অধিনায়ক,  

‘‘এটা খুবই দূর্ভাগ‌্যজনক। আমাকে স্বীকার করতেই হবে, ওকে আমার যতটা খেলানো উচিত ছিল বা সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল আমরা দিতে পারছি না। কারণ…আমার দলটা যদি দেখেন আমাদের কম্বিনেশন মেলাতে খুব কঠিন হচ্ছে। আমি প্রথম দুই-তিন-চারটি ম‌্যাচে কম্বিনেশন মেলাতে পারিনি। আমি চেষ্টা করেছি তাকে খেলানোর।’’

‘‘তবে সে পারফরম‌্যান্সের কারণে মাঠের বাইরে বসে নেই। এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি। যদি রংপুরের বিপক্ষে দেখেন, তার ভালোমানের ৪০ ঘরের একটা ইনিংস ছিল। তার নাম না থাকা স্রেফ কম্বিনেশনের কারণে।’’

বিগ বাজেটের বড় দল গড়ায় এক পজিশনেই তামিমের হাতে অনেক অপশন। শান্তকে না খেলানোর পেছনে কম্বিনেশন, ম‌্যাচ পরিকল্পনার বিষয়গুলোকে তামিম সামনে আনলেন,

‘‘যেটা আমিও বুঝে উঠতে পারছি না যে, ওকে আমি কোথায় ব‌্যাটিংটা করাব। বাঁহাতি-ডানহাতি একটা ইসু‌্য হয়ে যায়। আমি চাই না, তিনজনই বাঁহাতি থাকুক। সেটাও একটা ইসু‌্য। অনেক কিছু আছে আসলে। আমি মনে করি সব উত্তর দেওয়ার মতো। তবে আবারো বলতে চাই, তার মনোভাব দলের প্রতি অসাধারণ।’’

তামিমের সঙ্গে ওপেনিং করছেন তাওহীদ হৃদয়। তাওহীদ বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও নতুন বলে শুরুতে কার্যকারী রান করছেন। তামিমও ধারাবাহিক রান করছেন। তিনে নামছেন ডেভিড মালান। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার নিজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে রান করছেন অবিরত। টপ অর্ডারে শান্তর তাই সুযোগ মিলছে না। ডাগ আউটে ছয় ম‌্যাচ বসে থাকলেও দলের প্রতি তার মনোভাব দারুণ। নিয়মিত অনুশীলন করছেন। সিনিয়র-জুনিয়র সবার সঙ্গে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। খোদ তামিমই বললেন এসব কথা,

‘এটাও নিশ্চিত করতে চাই, দলের প্রতি ওর মনোভাব দুর্দান্ত। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। দেশের অন‌্যতম সেরা একজন ব‌্যাটসম‌্যান। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট, ফ্রাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতায় খেলতে পারছেন না। কিন্তু দলের সিনিয়র এবং জুনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি তার মনোভাব অসাধারণ। যেটা আমি এজন‌্য তাকে ধন‌্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই।’’

প্লে-অফ এবং প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে ফেলা তামিমের সুযোগ আছে নিজেদের শেষ ম‌্যাচে বেঞ্চের শক্তি পরখ করে দেখার। সেদিকেই কি যাবেন তামিম নাকি সেরা একাদশ নিয়ে নামবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না,

‘‘নির্ভর করবে। আমি এটা নিয়ে এখনো কথা বলিনি। এটার দুইটা দিক আছে। আপনি সেমি ফাইনাল (প্রথম কোয়ালিফায়ারের) আগে কোনো পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন কিনা। এটাও হতে পারে। আবার কারো যদি হালকা-পাতলা লেগে থাকে, নিগলস ওই ক্ষেত্রে এক-দুইজন পরিবর্তন করলেও করতে পারি। কিন্তু এটা নিয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্ত নেইনি।’’

শিরোপার লড়াইয়ে তামিম নতুন করে দলে যুক্ত করছেন নিউ জিল‌্যান্ডের পেসার অ‌্যাডাম মিলনেকে। শোনা যাচ্ছে, এক-দুই ম‌্যাচের জন‌্য আসবেন ডেভিড মিলারও। কাইল মায়ার্সেরও ফেরার কথা রয়েছে। তবে দারুণ ছন্দে থাকা দলটাকে আমূল পরিবর্তন করতে চান না বরিশালের অধিনায়ক,

‘‘আমরা একটা সাইন করিয়েছি। অ‌্যাডাম মিলনে। নিউ জিল‌্যান্ডের পেসার। এছাড়া এক-দুই জনের সঙ্গে কথা চলছে।’’

‘‘আমি ব‌্যক্তিগতভাবে পুরো সেট আপ পরিবর্তনের পক্ষে নই। আমি মনে করি, আমার দলটা ভালো করছে। যারাই খেলছে কন্ট্রিবিউট করছে। যে জায়গায় আমাদের মনে হয় যে একটু স্ট্রেন্থ করার দরকার সেটার চেষ্টা করবো। আমি মনে করি না আমাদের দলে ম‌্যাসিভ কোনো পরিবর্তন আসবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর র মন ভ ব ন করছ ন র ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ