তারা হয়তো মনে করেছে, টাকা খেয়ে ফেলবে
Published: 8th, February 2025 GMT
জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নালা-নর্দমা পরিষ্কারে এক শ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাইলেও মাত্র পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সে টাকাও এখনো ছাড় হয়নি। সরকার গুরুত্বটা বুঝছে না, এটা দুঃখ করে আজকে বলতে হচ্ছে। কেন বুঝতে পারছে না, তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি?’
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে নগরের সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে আজ শনিবার দুপুরে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে যুক্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে দেখি, সাড়ে চার শ কোটি টাকা দেনা রেখে গিয়েছে। তাই নগরের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১ শ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাই। টাকা তো অনেক খরচ হয়ে গেছে। এখন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, মাত্র পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা–ও এখনো পাওয়া যায়নি। সরকার কেন বুঝতে পারছে না? তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি। আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি। উনি (উপদেষ্টা) আছেন, এ জন্য বলছি৷ আমি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি।’
এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ থাকা টাকা নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারে খরচ করতে হচ্ছে বলে সভায় জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জলাবদ্ধতা না কমলে চট্টগ্রামে আসবেন না। প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতা কমবে, আপনিও আসবেন।
প্রকল্প অনুমোদনে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরে এমনও জায়গা আছে, যেখানে খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য গাড়ি বা বড় মেশিন ঢুকতে পারে না। এ ধরনের নাল-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ২৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ছয়-সাত মাস আগে সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় যদি গুরুত্ব নিয়ে না দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কীভাবে সমাধান করব। ওখানে উপদেষ্টা ও সচিব পরিবর্তন হচ্ছে, একজনের পর আরেকজন আসছেন, এই হচ্ছে অবস্থা। সবাই যদি গুরুত্ব দিয়ে দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেওয়ার মাধ্যমে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিডিএর যে কাজ, তা শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যতই নিতে চাই না কেন, অন্য কোনো উপায় নেই। এখন জলকপাট (স্লুইসগেট), খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। এ জন্য লোকবল দরকার, তাঁদের প্রশিক্ষণ দরকার, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দরকার। এ জন্য বাজেট দরকার।’
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা উপদেষ্টা পরিষদে অগ্রাধিকার পেয়েছে। চারজন উপদেষ্টা দায়িত্বে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন করে প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে আসবেন। বাজেটে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি জানান প্রকল্প পরিচালকেরা। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএর চেয়ারম্যান মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন প রকল প ন উপদ ষ ট পর ষ ক র র জন য সরক র ন রসন নগর র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।