ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে এ সম্মেলন হবে।

সরকারপ্রধানের সফর ঘিরে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ড.

ইউনূস বিদ্যমান ভিসা জটিলতা নিরসন ছাড়াও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

দুবাইয়ের ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আজিম তালুকদার বলেন, ‘আমিরাতের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হবে। আমাদের আশা, বৈঠকে তিনি বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা জোরালোভাবে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’

শারজাহ প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সংগঠক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমিরাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিজ দেশের মানুষকে চান। ভিসা জটিলতার কারণে ভিনদেশি শ্রমিক দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। শ্রমিক ভিসার সমাধান করা গেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। ড. ইউনূস এসব বিষয়ে নজর দেবেন আশা করছি।’

গত মাসে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। এ সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

শেখ লতিফা বিনতে মুহাম্মদ বিন রশিদ প্রধান উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে সামিটে অংশগ্রহণের অনুরোধ করেন, যাতে এই তিন তরুণ উপদেষ্টা সামিটে তুলে ধরতে পারেন– কীভাবে তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

জানা যায়, সম্মেলনে বিশ্বের অন্তত ৩০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। ৮০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ১৪০টি সরকারি প্রতিনিধি দল, ৬ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী ও শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, মিডিয়া, বিমান চলাচল, পরিবহন, পর্যটনসহ গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক খাতের ওপর আলোচনা করবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম র ত ব যবস সরক র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ