ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ফুচকার দোকানে চাঁদা দাবির অভিযোগ
Published: 9th, February 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ ফুচকা-চটপটির দোকানে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে বটতলা এলাকায় কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিভিন্ন হারে চাঁদা দাবি করেন তাঁরা।
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী ও ভুক্তভোগী দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী এসব দোকানদারের কাছে যান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসা বন্ধ আছে বলে জানান। তবে তাঁদের প্রতিদিন এক হাজার বা দেড় হাজার টাকা করে দিলে নির্বিঘ্নে তাঁরা ব্যবসা করতে পারবেন এবং কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাঁরা দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে দোকানদারেরা তৎক্ষণাৎ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরে যেকোনো সময় টাকা নিতে আসবেন বলে জানান।
বিষয়টি ছাত্রদলের অভ্যন্তরে জানাজানি হলে কয়েকজন নেতা-কর্মী এসব দোকানদারের কাছে যান এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছবি দেখান। এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের সদস্য গোলাম রাব্বানী অর্ণবকে শনাক্ত করেন। গোলাম রাব্বানী বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে থাকেন। বাকিদের শনাক্ত করতে পারেননি। তবে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন বলে জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ একটি ফুচকার দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর দোকানে যান। একপাশে ডেকে নিয়ে গোলাম রাব্বানী (ছবি দেখে শনাক্ত) তাঁর কাছে দৈনিক এক হাজার টাকা দাবি করেন। এ সময় আরও কয়েকজন দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে তিনি জানান।
আরেক দোকানদার বলেন, ‘আমার দোকানে কয়েকজন এসে চা-পানি খাওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন, আমাদের কিছু টাকাপয়সা দেন চা-পানি খাওয়ার জন্য। আমি তখন বলি, টাকাপয়সা এখন নেই। তাঁরা পরে যেকোনো সময় টাকা নিতে আসবেন বলে জানান।’
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। এখন যদি কেউ আমার নাম করে এমন কাজ করে থাকে, তাহলে কী বলব। আমি এমন কোনো কিছু করিনি। সবকিছু তো আপনারা জানেন, একজনের নাম বলে অন্যজন এমন কাজ করে।’
আপনার ছবি দেখালে দোকানদারেরা আপনাকে শনাক্ত করেছেন, এমন প্রশ্ন করলে রাব্বানী বলেন, ‘যদি তাঁরা বলেন, আমার কী করার আছে। আমি ছিলাম না, এসব মিথ্যা।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখব। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত