ঢাকায় ১০০ তলা ভবন নির্মাণে নিয়মনীতি করা হচ্ছে: রাজউক চেয়ারম্যান
Published: 11th, February 2025 GMT
নব্বইয়ের দশকে তিন বন্ধু মিলে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। রাজধানী ঢাকার বিজয়নগরে হাতে নিলেন প্রথম প্রকল্প। তবে প্রকল্প এগিয়ে নিতে টাকাপয়সার বন্দোবস্ত হচ্ছে না। এমন সময় একজন ব্যবসায়ী এগিয়ে এলেন। নগদ ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটা ফ্লোর (তলা) ও একটা গুদামের বুকিং দিলেন। তারপর থেকে উদ্যোক্তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
৩০ বছর আগে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করা ট্রপিক্যাল হোমস এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত প্রায় এক শ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব প্রকল্পের ২ হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ৫০ লাখ বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গা হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে তাদের ৩০টি প্রকল্প চলমান।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ মঙ্গলবার রাতে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের ৩০ বছর উদ্যাপন করেছে ট্রপিক্যাল হোমস। একই অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম ৪৫ তলা ভবনের অবিকল নকশা (ডামি) আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। ঢাকার মালিবাগে ৪৬ কাঠা জমির ওপর ভবনটি নির্মাণ করছে ট্রপিক্যাল হোমস।
ট্রপিক্যাল হোমসের অনুষ্ঠানে গ্রাহক থেকে শুরু করে জমির মালিক, স্থপতি, প্রকৌশলী, আবাসন ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো.
তিন বন্ধু মিলে শুরু করলেও কিছুদিন পর তাঁদের একজন ট্রপিক্যাল হোমসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর দুই বন্ধু চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ রবিউল হক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যান। রেজাউল করিম প্রয়াত হলে তাঁর ছেলে তানভীর রেজা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এসেছেন।
৩০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে মূল কান্ডারি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের এমডি শেখ রবিউল হক। আবৃত্তি দিয়ে শুরু করেন তাঁর বক্তব্য। বললেন, ‘মানুষের সেবা করার জন্য আমরা আবাসান ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আজ অবধি সেই যাত্রা অব্যাহত আছে।’ তিনি বলেন, ‘তিন দশকের ব্যবসায় আমরা কখনো ঋণে জর্জরিত হইনি। এভাবেও যে ব্যবসা করা যায়, সেটি আমরা দেখিয়েছি।’
শেখ রবিউল হক আরও বলেন, ‘ঢাকাকে আমরা বনসাই বানিয়ে রেখেছি। এখনো বেশির ভাগ ভবনই ৬-৭ তলা উচ্চতার। অথচ ঢাকার ভবনগুলো অন্তত ২৫ তলা উচ্চতার হওয়া উচিত। ১০০-১৫০ তলা ভবনও হতে হবে। কারণ, আমরা চাই না কোনো কৃষিজমি নষ্ট হোক।’
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বেশ কয়েকজন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তার মধ্যে রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘ট্রপিক্যাল হোমসের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত রিহ্যাবে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তারা ভালো কোম্পানি। মুনাফার চেয়ে মানুষের সুযোগ-সুবিধাই তারা বেশি দেখছে।’
রাজউক চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, ‘ঢাকা শহর সবার। এখানে আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করেন। ঢাকার ইতিহাস চার শ বছরের। এই সময়ে ঢাকার অনেক ক্ষতি হয়েছে; দূষণ হয়েছে। এখন আমরা সেটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ১০০ তলা ভবন করার চেষ্টা করছি। তবে রাজউকের নিয়মনীতির সঙ্গে মিলছে না। কারণ, জমির আয়তন ছোট। তাই আমরা এ বিষয়ে নিয়মনীতি কী করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করছি।’
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ নিয়ে ভুলভ্রান্তি আছে। অচিরেই আমরা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত করব। সেখানে বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণ নিয়ে যেসব বৈষম্য আছে, সেটি থাকবে না।’
স্থপতি রফিক আজম বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান বেশ আওয়াজ দিয়ে কাজ করে থাকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ট্রপিক্যাল হোমস চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সব সমস্যার সমাধান করেই ৫০-১০০ তলা ভবন বানাতে হবে।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ৪৫ তলা টিএ টাওয়ারের নকশা উন্মোচন করা হয়। এই ভবনের ৩ লাখ বর্গফুট জুড়ে হবে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল। এ ছাড়া বিপণিবিতান, অফিস, বিলাসবহুল হোটেল, সুইমিংপুল, ইনডোর পার্ক, ব্যায়ামাগার, হেলিপ্যাড ইত্যাদি থাকবে। ভবনের নির্মাণকাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সবশেষে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তানভীর রেজা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প ন ব যবস র জউক
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।