জনস্বাস্থ্যহানিকর পণ্যে করারোপ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক
Published: 13th, February 2025 GMT
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা এবং বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে মোড়কজাত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এসব খাবারে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাট স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, লিভার জটিলতা, হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো জটিল ও ব্যয়বহুল অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ। এসব রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অস্বাস্থ্যকর পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে এসব পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর এবং সারচার্জ বা স্বাস্থ্য কর আরোপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পন্থা। সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণেও এ ধরনের পদ্ধতি সহায়ক।
‘স্বাস্থ্য কর’ বলতে মূলত জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে এমন সব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য করকে বোঝায়। এ ধরনের ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর পণ্যকে নিরুৎসাহিত করে। প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে পণ্যের উপাদান, পুষ্টিগুণ, পরিমাণ ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তামাক, ফাস্টফুড, কোমল বা চিনিযুক্ত পানীয়, ব্যক্তিগত গাড়ি, প্যাকেটজাত খাদ্য, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ইত্যদির ওপর সারচার্জ আরোপ করেছে। বাংলাদেশেও এসব পণ্যের ওপর সারচার্জ আরোপ করে সেই অর্থ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে। ২০১৭ সালে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি’ পাস করে এই উৎস থেকে আসা অর্থ ব্যয়ের জন্য ১৪টি খাত চিহ্নিত করেছে। সরকার এই সারচার্জের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচ্ছে।
চিনি বা মিষ্টিযুক্ত পানীয় অ্যালকোহলবিহীন। একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা ২ হাজার ক্যালরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে সর্বোচ্চ দৈনিক চিনি গ্রহণের মাত্রা ৫০ গ্রাম (১২ চা চামচ)। অথচ একটি কার্বনেটেড কোমল পানীয়ের (৬০০ মিলি) বোতলে সাধারণত ৬৪ গ্রাম (১৫-১৬ চা চামচ) চিনি থাকে (২৫৬ ক্যালরির সমতুল্য), যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত সুপারিশের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এসব পণ্যের চাহিদা কমাতে এর ওপর কর বৃদ্ধি অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রমাণিত পন্থা।
প্রতিবছর প্রায় চার কোটি লোক অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যায়, যা বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ একটি কার্যকর পন্থা। বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু কোমল পানীয়ের ব্যবহার (২৫০ মিলি বোতল) ১৭ বোতল। তরুণ ও শিশুদের মধ্যে এই ব্যবহারের হার উদ্বেগজনক। এর ওপর করের ধারণা নতুন নয়। রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে মিষ্টিযুক্ত, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে কর আরোপ করা হয়েছে।
তামাকের ওপর কর আরোপ যেমন তামাকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে, তেমনি চিনিযুক্ত পানীয়ের ওপর কর আরোপ চিনির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে। ক্ষতিকর পণ্য নিয়ন্ত্রণে চিনি জাতীয় খাবারের (এসএসবি) ওপর কর আরোপের পাশাপাশি ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে। জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫০টিরও বেশি দেশে কর কার্যকর।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও মোড়কজাত খাদ্যর ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এসব খাবারে লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা অনেক। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মোড়কজাত খাবারে লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাটের ব্যবহার কমানো দরকার। সে জন্য মানুষের কাছে খাদ্যের মোড়কে পণ্যের উপাদান, পুষ্টিগুণ, পরিমাণ ও ক্ষতিকর দিকটিও তুলে ধরে সতর্কবার্তা প্রদান জরুরি।
বিশ্বের অনেক দেশে ট্রাফিক লাইট লেবেলিং সিস্টেম প্রচলিত। এই সিস্টেম জনগণকে খাবারে উপাদানের ব্যাপারে তথ্য দেয়। অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত উচ্চ, মাঝারি বা কম চর্বি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, শর্করা এবং লবণ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। মোড়কে লাল কালার থাকলে এটিতে উচ্চ পুষ্টিমান এবং কম নিরাপদ বোঝানো হয় এবং এটি পরিমাণে কম বা অল্প গ্রহণ করা উচিত। হলুদ কালার দিয়ে বোঝানো হয়, এসব খাবারে মাঝারি মাত্রার পুষ্টি বিদ্যমান। সবুজ দিয়ে বোঝানো হয়, এটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। পরিমাণে বেশি গ্রহণ করা যেতে পারে।
এ ধরনের ব্যবস্থা পুষ্টির লেবেল নির্ণয় করে স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার কেনার অভ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সহায়তা করে। জাম্বিয়ার মতো দেশও ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং করছে। সাধারণ মানুষ খাবার কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার জন্য তারা প্রতিটি খাবারের মোড়কের গায়ে রঙ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সৈয়দা অনন্যা রহমান: কর্মসূচিপ্রধান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য স ব স থ যকর জনস ব স থ য র ওপর কর ব যবস থ এ ধরন র পর ম ণ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক