নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা এবং বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে মোড়কজাত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এসব খাবারে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাট স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, লিভার জটিলতা, হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো জটিল ও ব্যয়বহুল অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ। এসব রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অস্বাস্থ্যকর পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে এসব পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর এবং সারচার্জ বা স্বাস্থ্য কর আরোপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পন্থা। সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণেও এ ধরনের পদ্ধতি সহায়ক। 

‘স্বাস্থ্য কর’ বলতে মূলত জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে এমন সব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য করকে বোঝায়। এ ধরনের ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর পণ্যকে নিরুৎসাহিত করে। প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে পণ্যের উপাদান, পুষ্টিগুণ, পরিমাণ ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তামাক, ফাস্টফুড, কোমল বা চিনিযুক্ত পানীয়, ব্যক্তিগত গাড়ি, প্যাকেটজাত খাদ্য, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ইত্যদির ওপর সারচার্জ আরোপ করেছে। বাংলাদেশেও এসব পণ্যের ওপর সারচার্জ আরোপ করে সেই অর্থ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় করা যেতে পারে। 

বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে। ২০১৭ সালে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি’ পাস করে এই উৎস থেকে আসা অর্থ ব্যয়ের জন্য ১৪টি খাত চিহ্নিত করেছে। সরকার এই সারচার্জের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচ্ছে। 

চিনি বা মিষ্টিযুক্ত পানীয় অ্যালকোহলবিহীন। একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা ২ হাজার ক্যালরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে সর্বোচ্চ দৈনিক চিনি গ্রহণের মাত্রা ৫০ গ্রাম (১২ চা চামচ)। অথচ একটি কার্বনেটেড কোমল পানীয়ের (৬০০ মিলি) বোতলে সাধারণত ৬৪ গ্রাম (১৫-১৬ চা চামচ) চিনি থাকে (২৫৬ ক্যালরির সমতুল্য), যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত সুপারিশের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এসব পণ্যের চাহিদা কমাতে এর ওপর কর বৃদ্ধি অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রমাণিত পন্থা। 

প্রতিবছর প্রায় চার কোটি লোক অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যায়, যা বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ একটি কার্যকর পন্থা। বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু কোমল পানীয়ের ব্যবহার (২৫০ মিলি বোতল) ১৭ বোতল। তরুণ ও শিশুদের মধ্যে এই ব্যবহারের হার উদ্বেগজনক। এর ওপর করের ধারণা নতুন নয়। রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে মিষ্টিযুক্ত, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে কর আরোপ করা হয়েছে। 

তামাকের ওপর কর আরোপ যেমন তামাকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে, তেমনি চিনিযুক্ত পানীয়ের ওপর কর আরোপ চিনির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে। ক্ষতিকর পণ্য নিয়ন্ত্রণে চিনি জাতীয় খাবারের (এসএসবি) ওপর কর আরোপের পাশাপাশি ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে। জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫০টিরও বেশি দেশে কর কার্যকর। 

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও মোড়কজাত খাদ্যর ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এসব খাবারে লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা অনেক। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মোড়কজাত খাবারে লবণ, চিনি ও ট্রান্সফ্যাটের ব্যবহার কমানো দরকার। সে জন্য মানুষের কাছে খাদ্যের মোড়কে পণ্যের উপাদান, পুষ্টিগুণ, পরিমাণ ও ক্ষতিকর দিকটিও তুলে ধরে সতর্কবার্তা প্রদান জরুরি। 

বিশ্বের অনেক দেশে ট্রাফিক লাইট লেবেলিং সিস্টেম প্রচলিত। এই সিস্টেম জনগণকে খাবারে উপাদানের ব্যাপারে তথ্য দেয়। অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত উচ্চ, মাঝারি বা কম চর্বি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, শর্করা এবং লবণ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। মোড়কে লাল কালার থাকলে এটিতে উচ্চ পুষ্টিমান এবং কম নিরাপদ বোঝানো হয় এবং এটি পরিমাণে কম বা অল্প গ্রহণ করা উচিত। হলুদ কালার দিয়ে বোঝানো হয়, এসব খাবারে মাঝারি মাত্রার পুষ্টি বিদ্যমান। সবুজ দিয়ে বোঝানো হয়, এটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। পরিমাণে বেশি গ্রহণ করা যেতে পারে।  

এ ধরনের ব্যবস্থা পুষ্টির লেবেল নির্ণয় করে স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার কেনার অভ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সহায়তা করে। জাম্বিয়ার মতো দেশও ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং করছে। সাধারণ মানুষ খাবার কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার জন্য তারা প্রতিটি খাবারের মোড়কের গায়ে রঙ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। 

সৈয়দা অনন্যা রহমান: কর্মসূচিপ্রধান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য স ব স থ যকর জনস ব স থ য র ওপর কর ব যবস থ এ ধরন র পর ম ণ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩ 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মঞ্জু টেক্সটাইলে এন্ড ডাইং কারখানায় গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মীসহ তিন জন দগ্ধ হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকায় কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল হান্নান, গার্ড কবির হোসেন ও সিনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম।

কারখানার সুপারভাইজার মিজানুর জানান, নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা চলে যাওয়ার ঠিক পরপরই তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস রুমে গ্যাসের অতিরিক্ত চাপে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণ ও আগুনের তীব্রতায় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ, সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক

মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ৫ ছাত্রনেতা

তিনি জানান, কারখানায় দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত গ্যাসের চাবি বন্ধ করে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দগ্ধ তিনজনকে দ্রুত রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আগুনে কারখানার কিছু কাপড় ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ইউনিট সেখানে যায়। তবে তার আগেই কারখানার লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। বিস্ফোরণ ও আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি তিনজন দগ্ধ হয়েছেন এবং তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/অনিক/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ