‘গর্ভনরের স্মৃতিকথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
Published: 22nd, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ‘গর্ভনরের স্মৃতিকথা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিএ ভবনের আইসিএবি মিলায়তনে বণিক বার্তার আয়োজনে এ অনুষ্ঠান হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এখানে আমি শুধু গভর্নরের সময়কাল নয়, আমার জীবনের নানা স্মৃতি নিয়েই কথা বলেছি। ২০১৯ সালে বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল। এবারে তাতে আরো কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
পঞ্চগড়ে ভাষা সৈনিক সুলতান বই মেলা শুরু
‘বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনা মোটেও সহজ নয়’
তিনি বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। বাংলাদেশ অর্থনীতি কোন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিল তা যারা এর ভেতরে গিয়েছি, তারা ছাড়া বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না। আমরা খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছি।”
অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, “আমরা বাঙালিরা বিদেশিদের কাছে নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করি। কেউ ওপরে উঠতে চাইলে তাকে টেনে নামানোর প্রবণতা আছে আমাদের। বিদেশিদের কাছে নিজেদের কথা বলবেন, কিন্তু একটু রয়ে-সয়ে করবেন।নিজেদের প্রতি সম্মানটুকু রাখবেন। সবাইকে নিয়ে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি, সেখানে সহযোগিতা করবেন। এটাই আশা করি।”
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, “বইটির প্রথম সংস্করণ আমরা ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছি। এ বছর তারই বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক কিছুই আমাদোর অজানা আছে। বাংলাদেশকে বোঝার জন্য, যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন, পাবলিক সার্ভিসে কাজ করেছেন; তাদের কাছ থেকে তাদের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ বইটি সে বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বইটির উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হলো এতে উঠে এসেছে তিনি কোথা থেকে কোথায় কোথায় এসছেন। তিনি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এ উঠে আসার গল্পের মধ্যে কোনো সংকোচ নেই। আরেকটি দিক হল তিনি কর্মজীবনে অবশ্যই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন, কিন্তু বইটিতে যাদের কথা উল্লেখ করেছেন সবার ভালো দিকটিই তুলে ধরেছেন। এছাড়া আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তিনি বইটিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কথা বলেছেন এবং বইটি উৎসর্গ করেছেন খেটে খাওয়া মানুষদের।”
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের, নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের গ্রাম দেখা কতটা জরুরি; তার লেখায় তা উঠে এসেছে। তিনি তার কর্মজীবনে উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়েছেন, যা তাকে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের বোঝার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। আমি মনে করি সরকারি চাকিরিতে প্রান্তিক পর্যায়ে পরিদর্শনের বিষয়টি আবার চালু করা উচিত।”
অর্থনীতিবিদ ড. মাহাবুব উল্লাহ বলেন, “ড. সালাহউদ্দিনের রাজনীতি ও লেখাপড়ার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ ছিল। বইটিতে তিনি তার জীবনের যে বর্ণনা তুলে ধরেছেন, সেখান থেকে আমরা একটা শিক্ষাই পাই। সেটি হল যেকোনো পর্যায়ে থেকে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে শিক্ষা।আমরা যদি শিক্ষাকে সর্বজনমুখী করতে পারি তাহলে দেখা যাবে সমাজের বৈষম্য অনেকাংশে কমে এসেছে।”
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মারুফুল ইসলাম, সাবেক ব্যাংকার ও লেখক ফারুক মঈনউদ্দিন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী, হাসান খালেদ ফয়সাল ও ড. জিয়াউল আবেদীন, আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেম প্রমুখ।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইম ল স ল হউদ দ ন আহম দ র জন ত পর য য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫