স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা ভালো রাখার ৭ উপায়
Published: 24th, February 2025 GMT
স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। ফ্ল্যাগশিপ মডেল হোক বা বাজেট ফোন—যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার অভাবে স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা দ্রুত কমতে থাকে। স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। তবে নিয়মিত কিছু কৌশল মেনে চললে ফোনের কার্যক্ষমতা দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায়। কৌশলগুলো দেখে নেওয়া যাক।
১.অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে ফেলা
নিয়মিত ব্যবহার না করলেও অনেকের ফোনে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করা থাকে। এসব অ্যাপ ফোনের স্টোরেজ দখল করে রাখার পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে। ফলে প্রসেসিং পাওয়ার ও ব্যাটারি খরচ হতে থাকে। ফোনের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে হলে কিছুদিন পরপর ইনস্টল করা অ্যাপের তালিকা পর্যালোচনা করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো মুছে ফেলতে হবে। ফোনে প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলো মুছে ফেলা যায় না, আর তাই সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে রাখতে হবে। এর ফলে সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকবে না।
২. স্টোরেজ ব্যবস্থাপনাঅপ্রয়োজনীয় ফাইল, অডিও, ভিডিও ও ডকুমেন্ট জমতে জমতে ফোনের স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে যায়, যা ফোনের গতি কমিয়ে দেয়। আর তাই নিয়মিত ফাইল ম্যানেজার বা স্টোরেজ অপশন থেকে বড় ও অব্যবহৃত মিডিয়া ফাইলগুলো মুছে ফেলতে হবে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর ফোন ধীরগতির হয়ে গেলে ফ্যাক্টরি রিসেট করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার থাকার ৬ লক্ষণ১১ নভেম্বর ২০২৪৩. অ্যাপের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহারহালনাগাদ সংস্করণের অ্যাপগুলোতে সাধারণত শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত থাকার পাশাপাশি কাজের গতি বৃদ্ধি করা হয়। আর তাই ফোনের স্বয়ংক্রিয় আপডেট অপশন চালু করে নিয়মিত হালনাগাদ সংস্করণের অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে বিভিন্ন অ্যাপের হালনাগাদ সংস্করণ ইনস্টল করতে হবে।
৪. সুরক্ষিত কভার ও স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহারদুর্ঘটনাবশত হাত থেকে পড়ে গেলে বা পানির সংস্পর্শে এলে ফোনের অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যারের ক্ষতি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে ফোনের কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। আর তাই ফোনে শক্ত কভার ও স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনে আড়ি পাতা যেভাবে বুঝবেন, যেভাবে ঠেকাবেন১২ অক্টোবর ২০২৪৫. চার্জিং পোর্ট ও স্পিকার পরিষ্কারচার্জিং পোর্ট ও স্পিকারে ধুলা জমে গেলে চার্জ নেওয়ার সমস্যা হতে পারে বা অডিও আউটপুট কমে যেতে পারে। আর তাই নরম ব্রাশের মাধ্যমে চার্জিং পোর্ট ও স্পিকার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কখনোই ধারালো কিছু ব্যবহার করা যাবে না; কারণ, এতে ফোনের হার্ডওয়্যারের ক্ষতি হতে পারে।
৬. অতিরিক্ত তাপ ও পানির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাঅতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতা ফোনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। গরম আবহাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহারে ব্যাটারি দ্রুত গরম হয়ে যায় এবং দীর্ঘ মেয়াদে এর স্থায়িত্ব হ্রাস পেতে পারে। ফোন অতিরিক্ত গরম হলে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ করতে হবে এবং স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিতে হবে। ফোনের আইপি রেটিং দেখে বুঝে নিতে হবে, এটি কতটা পানিরোধী। যদি ফোন পানিতে পড়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে সম্পূর্ণ শুকানোর পর চালু করতে হবে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোন কেনায় এ বছর যেসব বিষয় বিবেচনা করছেন ক্রেতারা১১ ডিসেম্বর ২০২৪৭. ব্যাটারির যত্নফোনের ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য সঠিক চার্জিং অভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি। ব্যাটারির চার্জ ২০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ফাস্ট চার্জিং এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এটি ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। ফোন দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে গেলে বা চার্জ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত গরম হলে ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ
আরও পড়ুনস্মার্টফোন মেরামত করতে দেওয়ার আগে যে ৫ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে১৪ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব যবহ র আর ত ই
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল