পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলেন স্বজনরা
Published: 26th, February 2025 GMT
রাজবাড়ীতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ফরিদ শেখ নামে মাদক মামলার এক আসামিকে পরিবারের লোকজন ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ সময় ওয়াহিদুল হাসান নামে এক উপপরিদর্শকসহ দুই কনস্টেবল আহত হয়েছেন। আজ বুধবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কাজীবাধা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফরিদ শেখ কাজীবাধা গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৯টি মাদক মামলা আছে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর ডিবি ওসি মফিজুল ইসলাম।
রাজবাড়ী ডিবি সূত্র জানায়, সকালে ডিবি পুলিশের একটি দল কাজীবাধা এলাকায় ফরিদ শেখের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও চার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। ফরিদকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলার সময় পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে ঘিরে ধরেন। এর পর তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ফরিদকে ছিনিয়ে নেন। এতে এসআই ওয়াহিদুল হাসানসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে রাজবাড়ী সদর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন– আসামি ফরিদের দুই সহোদর আবুল কালাম আজাদ ওরফে পিনু শেখ ও মিন্টু শেখ, ভাইয়ের স্ত্রী শেফালী বেগম, পরিবারের অপর তিন সদস্য নাসিমা বেগম, শিমু বেগম ও সোহাগী বেগম। পালিয়ে যাওয়া আসামি ফরিদ শেখ ও তার স্ত্রীকে আটকের চেষ্টা চলছে।
রাজবাড়ীর ডিবি ওসি মফিজুল ইসলাম জানান, মাদকসহ আসামি ফরিদকে ধরে আনার সময় বাড়ির লোকেরা হামলা করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। হামলায় ডিবির তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। জব্দ করা মাদক পুলিশের হেফাজতে আছে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরীফ আল রাজীব বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল।
আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’
আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’
নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/মাসুম/বকুল