বিষাক্ত বর্জ্যে অর্ধশতাধিক গ্রামের পরিবেশ বিপর্যস্ত
Published: 28th, February 2025 GMT
কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) পাশের গ্রাম দিশাবন্দ, রাজাপাড়া ও কাজীপাড়া। এসব গ্রামের ভেতরের একটি খাল দিয়ে ইপিজেড আর সিটি করপোরেশনের ময়লা ও দূষিত পানি দক্ষিণ এলাকায় প্রবাহিত হচ্ছে।
দিশাবন্দ মসজিদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের ভাষ্য, ইপিজেড করার আগে পানিতে এমন দুর্গন্ধ ছিল না। এসব বিষাক্ত পানি ইপিজেডের ভেতর থেকেই বের হচ্ছে। খাল থেকে ঘরের ভেতরেও যাচ্ছে দুর্গন্ধ। এমন দাবি পাশের লক্ষ্মীনগর, কাজীপাড়া ও উনাইসার গ্রামের বাসিন্দাদেরও।
তবে কলকারখানার ‘বিষাক্ত তরল বর্জ্য’ নিয়ে ইপিজেড, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এবং দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের মার্চে কুমিল্লা পুরোনো বিমানন্দর এলাকার ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জমিতে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০০০ সালের ১৫ জুলাই এই ইপিজেড উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে দেশি-বিদেশি ৪৮টি কারখানা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইপিজেডের দক্ষিণ প্রান্তে তরল বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপন কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে শোধনাগারটি। এর পরও বিষাক্ত তরল বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ রোধে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
গতকাল শুক্রবার মোস্তফাপুর, দিশাবন্দ, রাজাপাড়া, লক্ষ্মীনগর ও কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইপিজেড প্রতিষ্ঠার আগে নগরীর খালে এমন কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি দেখেননি তারা। উনাইসার এলাকায় ইপিজেডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সীমানাপ্রাচীরের নিচ দিয়ে বের হচ্ছে এসব বিষাক্ত পানি। এরপর পাশের দিশাবন্দ ও কাজীপাড়া খাল হয়ে এসব বিষাক্ত পানি মোস্তফাপুরে গিয়ে গুংগাইজুরি খালে পড়ছে। এর পর সদর দক্ষিণ উপজেলার
বিজয়পুর এলাকা হয়ে লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকায় গিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মিশছে। এসব এলাকার খাল-বিল ও নালায় গাঢ় কালো রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পানি।
কাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মীর হোসেন বলেন, পানির সঙ্গে আসা দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। বিষাক্ত গ্যাসের কারণে বাসার ফ্রিজ ও মসজিদের এসিও নষ্ট হয়ে গেছে।
রাজাপাড়া গ্রামের সালেহ আকরামের অভিযোগ, এলাকার বড় একটি ডেইরি ফার্মের বর্জ্য খালে প্রবাহিত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে।
দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদ ও কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অস্বস্তিকর পরিবেশের জন্য সিটি করপোরেশন ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের মাধ্যমে সব বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। তাদের কোনো ধরনের বর্জ্য খাল ও জলাশয়ে মিশছে না। একই খালে সিটি করপোরেশনের পানি প্রবাহিত হয়। সেই পানিই বিষাক্ত।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম সমকালকে বলেন, নগরের ড্রেনের পানি এত বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত নয়। কারণ নগরীর পানি আরও একাধিক পয়েন্ট দিয়ে বের হয়। সেখান থেকে তো এত অভিযোগ আসছে না। তবুও নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি উন্নত প্রযুক্তির প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বলেন, ইপিজেড
এলাকা থেকে হঠাৎ ড্রেন সরিয়ে নিতে গেলে নগরীর পানি প্রবাহে বড় ধরনের সমস্যা হবে। নগরীর পানিতে বিষাক্ত উপাদান পাওয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি নগর ভবনে আসেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক বর্জ্য আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের ফসলি জমি, খাল-বিল, নদী-নালায় মিশে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। বিষাক্ত বর্জ্যে জলজ উদ্ভিদ-মাছ মরে যাচ্ছে, উৎকট গন্ধে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কুমিল্লা বাঁচাও আন্দোলন ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আখতার হোসাইন স্বাক্ষরিত ৬ পাতার অভিযোগে ইপিজেড ও সিটির বিষাক্ত বর্জ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৫৫টি গ্রামের জনগণের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় এবং মহানগরের প্রাকৃতিক খালের সঙ্গে বিষাক্ত বর্জ্যের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়। অভিযোগে ইপিজেডের ভেতর থেকে সিটি করপোরেশনের দুটি বড় ড্রেন সরিয়ে নেওয়া, বর্জ্য শোধনাগার নিয়মিত অনলাইন মনিটর এবং অপরিশোধিত তরল সিইটিপি ব্যতীত অন্য কোনো বাইপাস নালার মাধ্যমে অপসারণ না করা এবং সব খালের পুনঃখনন দাবি করা হয়। অভিযোগে বিষাক্ত বর্জ্যে কৃষকের ৫৯০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরা হয়।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মনিরুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিবেশ মারাত্মক দূষণের কবলে পড়ে। বেশ কয়েকবার ইপিজেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম করা হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন কেউ দায় এড়াতে পারে না। কারণ সিটি কর্তৃপক্ষ আশপাশের খাল ও নালা খনন করলে সমস্যা কিছুটা হলেও কমে আসত। তিনি বলেন, ইপিজেড থেকে সিটি কর্তৃপক্ষ বাড়তি কোনো সুবিধা নেয় কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। আগামী তিন মাসের মধ্য দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বেপজা কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব জানান, কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য শোধনাগার ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে। ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের তরল বর্জ্য পরিশোধন করে দক্ষিণ পাশের খালে নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, ইপিজেডের ভেতরে সিটি করপোরেশনের দুটি নালা রয়েছে। সেগুলো দিয়ে মানববর্জ্যসহ শহরের দূষিত পানি ইপিজেডের পরিশোধিত পানির সঙ্গে বের হচ্ছে। মানুষ না বুঝেই ইপিজেডকে দোষারোপ করছে।
কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘শুধু যে ইপিজেডের বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষিত হয়
তা নয়, আমরা সিটির অভ্যন্তরের কিছু ড্রেন থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরিবেশের জন্য
ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছি। কারণ বাসাবাড়ির মানববর্জ্য, সাবান, ডিটারজেন্ট, নির্মাণাধীন ভবনের রংসহ বিভিন্ন বর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে ড্রেনে গিয়ে মিশছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষ ক ত বর জ য বর জ য প দ শ বন দ র বর জ য নগর র প পর ব শ পর শ ধ এল ক র রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
কোন আসনে বিএনপির প্রার্থী কে, দেখে নিন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। কোন আসনে বিএনপির মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, তার তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি। জাতীয় সংসদের আসন ৩০০টি। এর মধ্যে কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি আর কিছু আসন জোট শরিকদের জন্য রেখে দিয়েছে বিএনপি।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী–০১, বগুড়া–০৭ ও দিনাজপুর–০৩ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বগুড়া-৬ আসনে।
প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির প্রার্থীর তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো–