ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফের পদত্যাগের ঘোষণা
Published: 3rd, March 2025 GMT
নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফ। বিচার বিভাগের প্রধানের ‘উপদেশ’ মেনে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের পদত্যাগপত্র পোস্ট করেন জারিফ।
পদত্যাগপত্রে গত ৯ মাস প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে নিবেদিতভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করে জারিফ লেখেন, ছয় মাস ধরে ‘তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে জঘন্য অপমান, অপবাদ এবং হুমকি’ সহ্য করতে হয়েছে।
জারিফকে নিজের সরকারে কৌশলগতবিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। নির্বাচনী প্রচারে পেজেশকিয়ানের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন জারিফ।
জারিফ ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির আমলে আট বছর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে করা ইরানের পরমাণু চুক্তিতে তিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
পদত্যাগপত্রে গত ছয় মাসকে নিজের ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ‘সবচেয়ে তিক্ত’ সময় বলে উল্লেখ করেছেন জারিফ। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিরোধীরা তাঁর সমালোচনা শুরু করেন।
জারিফের সমালোচকদের অনেকের অভিযোগ, তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। কারণ, তাঁর সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে। তাঁরা জন্মসূত্রে ওই দেশের নাগরিক।
পদত্যাগপত্রে জারিফ লেখেন, ‘জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে ছোটখাটো ভূমিকা রাখায় গত চার দশকে আমি অসংখ্য অপমান ও অভিযোগ সহ্য করেছি। আমার ছোটখাটো অবদানের মধ্যে আরোপিত যুদ্ধের অবসান থেকে শুরু করে সফল পরমাণু চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। বিরামহীন মিথ্যা ও বক্তব্য বিকৃতির মুখেও দেশের স্বার্থে আমি এত দিন চুপ ছিলাম।’
জারিফ জানান, বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই তাঁকে পদত্যাগ করতে ‘উপদেশ’ দিয়েছেন। দেশের চলমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে ‘সরকারের ওপর আরও চার তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে’ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন।
ইরানের সাবেক শীর্ষ এই কূটনীতিক লেখেন, ‘আশা করছি, আমার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছা ও সরকারের সফলতার পথে বাধা দূর হবে।’
জারিফ পেজেশকিয়ানের মন্ত্রিসভা ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদেরা তাঁকে অপসারণ করতে চাইছিলেন। তাঁকে অপসারণ করতে তাঁরা সম্প্রতি পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।
পদত্যাগের ঘোষণার আগেও জারিফের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্যি নয় বলে সব সময় উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে জারিফের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের ওপর চাপ কমাতে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে।
এর আগে রোববার পার্লামেন্টের এক অনাস্থা ভোটে ইরানের অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মতিকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে দেশটির মুদ্রার মানের রেকর্ড পতন হয়েছে।
আরও পড়ুনইরানের অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করল পার্লামেন্ট২১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদত য গপত র র পদত য গ র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।