ছেলেকে বিমানবন্দরে দিতে এসে আগুনে প্রাণ গেল বাবার
Published: 4th, March 2025 GMT
শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল একমাত্র ছেলে মনিম জমাদ্দারের। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ফ্লাইট। ছেলেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে সোমবার সকালেই গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসেন বাবা মিরন জমাদ্দার (৫৫)। ওঠেন শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেল সৌদিয়ায়। স্বজনকে বলতেন, জীবিত থাকতেই যেন ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে পারেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না মিরনের। গতকাল সোমবার সকালে গুলশান থানাধীন যে আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন, ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান তিনি। একই আগুনে ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দু’জন। তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহজাদপুরের আবাসিক হোটেল ভবনের দোতলায় বিউটি পার্লারে আগুন লাগে। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে হোটেলে। এতে প্রাণ হারান চারজন। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ধারণা করা হচ্ছে, বিউটি পার্লারের এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত।
পুলিশ বলছে, চারজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। মিরন ছাড়া অপরজন হলেন নিউ ঢাকা হলিডেস ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক ইসরাফুল আলম সজীব (৪০)। তিনি নদ্দা কালাচাঁদপুরে পরিবার নিয়ে বাস করতেন।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান ঘটনাস্থলে জানান, ভবনের দোতলার বিউটি পার্লারে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। দোতলা থেকে আগুন অন্য তলায় ছড়াতে পারেনি। এর আগেই দুপুর ১টা ৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। চারতলার টয়লেটে একজন এবং ছয়তলার চিলেকোঠায় দরজার সামনে তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ওই তিনজন ছাদে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দরজা তালাবদ্ধ থাকায় তারা আটকা পড়ে ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে মারা যান। ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া আবাসিক হোটেলের লাইসেন্সও নেই। ভবনটিতে একটাই সিঁড়ি, সেটা সরু। আগুনের কারণ জানতে তদন্ত কমিটি করা হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ সমকালকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা চারজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। হোটেলের মালিকপক্ষ এবং বিউটি পার্লারের মালিককে পাওয়া যায়নি। এ কারণে হোটেলে কতজন অতিথি ছিল, জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ছয়তলা ভবনের ছাদের অর্ধেকাংশে দুটি কক্ষ করা আছে। সে হিসেবে সাড়ে ছয়তলা বলা যায়। দুই কক্ষের মাঝখানে চলার পথ এবং সেখান থেকে ছাদে যাওয়ার দরজা। টিনের দরজায় তালা ঝুলছে। ভবনটির নিচতলায় ফার্নিচার ও ফটো স্টুডিও। দোতলায় গোল্ডেন টিউলিপ বিউটি লাউঞ্জ নামের বিউটি পার্লার। এ প্রতিষ্ঠানেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে প্রতিষ্ঠানের সব আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনতলা থেকে সাড়ে ছয়তলা পর্যন্ত হোটেল সৌদিয়া। বিদেশগামী যাত্রী এবং গ্রামের বাড়ি থেকে তাদের সঙ্গে আসা লোকজনই বেশি ওঠে এই হোটেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী নিচতলার প্লাস্টিক দরজা ব্যবসায়ী ওবাইদুর রহমান জানান, সকাল ১০টায় তিনি দোকান খোলেন। দুপুর ১২টার পর হঠাৎ রাস্তার লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করেন। তিনি দ্রুত দোকান থেকে বের হয়ে দেখেন, দোতলার বিউটি পার্লারে আগুন জ্বলছে। সেখান থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনিসহ স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল মিয়া জানান, দোতলা যখন জ্বলছিল, তখন হোটেলের তিনতলার বারান্দার কাচ ভেঙে কার্নিশ বেয়ে চারজনকে নেমে যেতে দেখেছেন তিনি।
নিহত মিরন জমাদ্দারের শ্যালক হিরন তালুকদার জানান, তাঁর ভগ্নিপতির বাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দারুলহুদা গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন সৌদিতে ছিলেন। আট বছর আগে দেশে ফিরে গ্রামে চাষাবাদ শুরু করেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মনিম জমাদ্দারকে সৌদি আরবে পাঠানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। প্রায়ই বলতেন, তিনি জীবিত থাকতে যেন মনিমকে বিদেশে পাঠাতে পারেন। এতে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চিন্তা থাকবে না।
হিরন আরও জানান, মনিমের সৌদি আরবে যাওয়ার সব ব্যবস্থা ভগ্নিপতিই করেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছিল। ছেলেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোমবার সকালে আমরা ঢাকায় এসে হোটেল সৌদিয়ার ৪০২ নম্বর কক্ষে উঠি। মনিম কয়েক দিন আগে ঢাকায় এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে। হোটেলটি সে-ই ঠিক করে রেখেছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হোটেলে ওঠে ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে ওঠার পর মিরন জানান, তিনি নাশতা করেছেন। আমাকে নাশতা করতে বাইরে যেতে বলেন। আমি নাশতা করে হোটেলের কাছে পৌঁছামাত্র দেখি আগুন জ্বলছে। দুলাভাইকে ফোন করলে তিনি বলেন, প্রচুর ধোঁয়া, শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাথরুমের মধ্যে অবস্থান করছেন। এর পরই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বাবার মৃত্যুর খবরে ছেলে মনিম ছুটে আসেন হোটেলে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সমকালকে বলেন, আমাকে ঘিরে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। বাবাই চেয়েছিলেন আমি বিদেশ যাই। আমাকে বিমানবন্দরে এগিয়ে দিতে এসে প্রাণ হারাতে হলো তাঁকে। মঙ্গলবার সৌদি আরবে তিনি যাচ্ছেন না জানিয়ে বলেন, ফ্লাইটের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান জানান, নিহত দু’জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ নিহতদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভবনের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল গাড়ি, চালক অক্ষত হলেও নিহত ৪
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ে একটি গাড়ি দ্রুত বেগে একটি ভবনের ভেতর ঢুকে পড়লে শিশুসহ চারজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। যে ভবনটিতে গাড়ি ঢুকে পড়েছিল, সেটি ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
পুলিশ বলেছে, ওয়াইএনওটি আফটার স্কুল ক্যাম্পে ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বয়স ৪ থেকে ১৮ বছর।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার বিকেলে ইলিনয়ের চ্যাথাম গ্রামে একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে এসে ভবনটির এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কেউ ইচ্ছা করে এ কাজ করেছেন, নাকি এটি দুর্ঘটনা ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইলিনয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। গাড়ির ধাক্কায় মারা পড়া তিনজনের মৃতদেহ ভবনের বাইরে পড়ে ছিল। আরেকটি মৃতদেহ ভবনের ভেতরে পাওয়া গেছে।এ ঘটনার পর হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইলিনয় অঙ্গরাজ্য পুলিশ বলেছে, গাড়িচালক অক্ষত আছেন। তবে পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইলিনয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। গাড়ির ধাক্কায় মারা পড়া তিনজনের মৃতদেহ ভবনের বাইরে পড়ে ছিল। আরেকটি মৃতদেহ ভবনের ভেতরে পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার বলেছেন, তাঁর প্রশাসন থেকে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।