কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে মোহাম্মদ আলী (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার মহিষখোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মোহাম্মদ আলীর বাড়ি মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন থেকে দেড় মাস ধরে কয়লাবোঝাই ট্রাক নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া (৩০) ও তাঁর লোকজন ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। হারুন মিয়া নিজেকে ‘তারেক জিয়া প্রজন্ম দল’ নামের একটি সংগঠনের মধ্যনগর উপজেলা শাখার সাবেক সদস্যসচিব হিসেবে পরিচয় দেন।

ওই চাঁদা আদায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে গতকাল বিকেল সোয়া চারটার দিকে বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠক বসে। বৈঠকে হারুন মিয়ার লোকজন ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেনের (৪৫) লোকজনদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে দুই পক্ষের লোকজন সেখান থেকে চলে যান।

এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হারুন মিয়ার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলে ৪০ থেকে ৪৫ জন লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে মহিষখোলা বাজারে হামলা চালান। এ সময় মুক্তার হোসেন ও হারুন মিয়ার লোকজনদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। হামলাকারী ব্যক্তিরা মহিষখোলা বাজারে চারটি দোকান ভাঙচুর করেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হারুন মিয়ার লোকজনের ইটের টুকরার আঘাত লাগে মোহাম্মদ আলীর। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তখন হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন সেখান থেকে চলে যান। স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ আলীকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। রাত আটটার দিকে মোহাম্মদ আলী মারা যান।

নিহত ব্যক্তির খালাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া (৬০) বলেন, মোহাম্মদ আলী ভাই দিনের বেশির ভাগ সময় মহিষখোলা বাজারেই থাকতেন। হারুন মিয়ার লোকজনের হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এ সম্পর্কে উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন বেশ কিছুদিন ধরে কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। আমরা এতে বাধা দেওয়ায় হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন হামলা করেছেন। ভাঙচুর থামাতে গিয়ে হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজনের ইটের টুকরার আঘাতে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে।’
ওই ঘটনার পর হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজনদের কেউ এলাকায় নেই। এ জন্য তাঁদের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজীব রহমান বলেন, অবৈধভাবে কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছে। ওই বৃদ্ধ কীভাবে মারা গেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ র ন ম য় র ল কজন কয়ল ব ঝ ই ট র ক উপজ ল র র উপজ ল স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ