সুনামগঞ্জে কয়লাবোঝাই ট্রাকে চাঁদাবাজিতে বাধা, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে নিহত ১
Published: 11th, March 2025 GMT
কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে মোহাম্মদ আলী (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার মহিষখোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাম্মদ আলীর বাড়ি মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন থেকে দেড় মাস ধরে কয়লাবোঝাই ট্রাক নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া (৩০) ও তাঁর লোকজন ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। হারুন মিয়া নিজেকে ‘তারেক জিয়া প্রজন্ম দল’ নামের একটি সংগঠনের মধ্যনগর উপজেলা শাখার সাবেক সদস্যসচিব হিসেবে পরিচয় দেন।
ওই চাঁদা আদায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে গতকাল বিকেল সোয়া চারটার দিকে বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠক বসে। বৈঠকে হারুন মিয়ার লোকজন ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেনের (৪৫) লোকজনদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে দুই পক্ষের লোকজন সেখান থেকে চলে যান।
এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হারুন মিয়ার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলে ৪০ থেকে ৪৫ জন লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে মহিষখোলা বাজারে হামলা চালান। এ সময় মুক্তার হোসেন ও হারুন মিয়ার লোকজনদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। হামলাকারী ব্যক্তিরা মহিষখোলা বাজারে চারটি দোকান ভাঙচুর করেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হারুন মিয়ার লোকজনের ইটের টুকরার আঘাত লাগে মোহাম্মদ আলীর। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তখন হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন সেখান থেকে চলে যান। স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ আলীকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। রাত আটটার দিকে মোহাম্মদ আলী মারা যান।
নিহত ব্যক্তির খালাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া (৬০) বলেন, মোহাম্মদ আলী ভাই দিনের বেশির ভাগ সময় মহিষখোলা বাজারেই থাকতেন। হারুন মিয়ার লোকজনের হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ সম্পর্কে উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন বেশ কিছুদিন ধরে কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। আমরা এতে বাধা দেওয়ায় হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজন হামলা করেছেন। ভাঙচুর থামাতে গিয়ে হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজনের ইটের টুকরার আঘাতে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে।’
ওই ঘটনার পর হারুন মিয়া ও তাঁর লোকজনদের কেউ এলাকায় নেই। এ জন্য তাঁদের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজীব রহমান বলেন, অবৈধভাবে কয়লাবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছে। ওই বৃদ্ধ কীভাবে মারা গেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ন ম য় র ল কজন কয়ল ব ঝ ই ট র ক উপজ ল র র উপজ ল স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সেই রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যা ঘটেছিল
২৩ আগস্ট রাতে আমাদের গ্রেপ্তার
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, এই লেখক শেখ আবদুল আজিজ ও আবদুস সামাদ আজাদ—এই ৬ জনকে ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট একসঙ্গে গ্রেপ্তার করে আমাদের পল্টনে কন্ট্রোল রুমে একটি ভাঙা বাড়িতে নেওয়া হয়। আমরা বসা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সৈয়দ আহমদকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনৈক কর্নেল ফারুককে অনুরোধ করেছিলেন।
কর্নেল ফারুক উত্তরে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সবার ট্রায়াল এখানে হবে।’ আমাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছিল, ‘ইউ উইল হ্যাভ টু জাস্টিফাই ইয়োর করাপশন।’ এ কথা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, এটা কোর্ট নয়, আদালত নয়, কীভাবে এখানে বিচার হবে? এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরস্পরের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যে মেজর ডালিম এসে এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগল। কামরুজ্জামান ডালিমকে বলেছিল, ‘এ রকম তো কথা ছিল না!’ তারপর ডালিম চলে গেল। আমাদের সামনে আমাদের সহানুভূতিশীল পুলিশ কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিছু সময় পর তারা এসে বলল, ‘আপনারা এই গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তাড়াতাড়ি ওঠেন; সেন্ট্রাল জেলে যেতে হবে।’ আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং ভাবলাম, বেঁচে গেলাম। সেন্ট্রাল জেলে প্রবেশ করলাম। আমাদের নতুন জেলে থাকার জায়গা করে দেওয়া হলো।