মাগুরার শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার শুরু হবে এক সপ্তাহের মধ্যে: আইন উপদেষ্টা
Published: 13th, March 2025 GMT
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুর ধর্ষণ মামলার বিচার আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, বিশেষ ব্যবস্থায় আজকেই (বৃহস্পতিবার) ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।
বিগত সময়ের উদাহরণ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, অতীতেও ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ সাত থেকে আট দিনের মধ্যে শেষ করার নজির রয়েছে। এবারও সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এটি করতে পারলে বিচারক দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বেশ কিছু পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য রয়েছে। ডিএনএ টেস্ট পাওয়া যাবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। ফলে আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুততার সঙ্গে মামলার বিচার হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হলে কত দিনে শেষ হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হলেও কত দিনে শেষ হবে, তা বলতে পারছি না। তবে সাত থেকে আট দিনে বিচারকাজ শেষ করার নজির রয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নতুন একটি আইন করছি। আশা করা হচ্ছে রোববার বা সোমবার নতুন আইন তৈরি করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শিশু ও বলাৎকারের ঘটনার বিচার করা; যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া যায়। আগামী রোববারের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের গেজেট প্রকাশ করা হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় যারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তাদের বিষয়ে আপনারা সজাগ থাকবেন। এই বিষয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না। আমাদের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট করে বলবেন। আমরা নিজেদের জবাবদিহি করব। শিশু ধর্ষণের বিষয়ে আমাদের কোনো ভুল নেই। ভবিষ্যতে কোনো ভুল হলে সংশোধন করব। ধর্ষণ ব্যক্তির ঘটনা হলেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই, সরকারের বিন্দুমাত্র অবহেলা নেই। সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সব বিচার রাষ্ট্র করতে পারবে না। কিন্তু কিছু বিচার করতে হয়। সমাজে একটা বার্তা দিতে হয়। মাগুরার শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দাফনের জন্য আজকেই মৃতদেহ হেলিকপ্টারযোগে মাগুরায় নেওয়া হবে। মৃতদেহ ও পরিবারের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার যাবেন। দাফন পর্যন্ত তিনি থাকবেন। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। স্যাম্পল কালেকশন হয়ে হয়েছে। এরই মধ্যে ১২–১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি। সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘ধর্ষকদের প্রতিও আমাদের তীব্র ঘৃণা। আমরা সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনাদের কোনো পরামর্শ থাকলে জানাবেন। কিন্তু এই বিষয়কে সামনে রেখে কেউ যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের দিকে নজর দেবেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট র ঘটন ন আইন
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত