মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুর ধর্ষণ মামলার বিচার আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, বিশেষ ব্যবস্থায় আজকেই (বৃহস্পতিবার) ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।

বিগত সময়ের উদাহরণ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, অতীতেও ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ সাত থেকে আট দিনের মধ্যে শেষ করার নজির রয়েছে। এবারও সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এটি করতে পারলে বিচারক দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন।

আসিফ নজরুল বলেন, বেশ কিছু পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য রয়েছে। ডিএনএ টেস্ট পাওয়া যাবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। ফলে আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুততার সঙ্গে মামলার বিচার হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হলে কত দিনে শেষ হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হলেও কত দিনে শেষ হবে, তা বলতে পারছি না। তবে সাত থেকে আট দিনে বিচারকাজ শেষ করার নজির রয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নতুন একটি আইন করছি। আশা করা হচ্ছে রোববার বা সোমবার নতুন আইন তৈরি করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।’

আসিফ নজরুল বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শিশু ও বলাৎকারের ঘটনার বিচার করা; যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া যায়। আগামী রোববারের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের গেজেট প্রকাশ করা হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় যারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তাদের বিষয়ে আপনারা সজাগ থাকবেন। এই বিষয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না। আমাদের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট করে বলবেন। আমরা নিজেদের জবাবদিহি করব। শিশু ধর্ষণের বিষয়ে আমাদের কোনো ভুল নেই। ভবিষ্যতে কোনো ভুল হলে সংশোধন করব। ধর্ষণ ব্যক্তির ঘটনা হলেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে।’

আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই, সরকারের বিন্দুমাত্র অবহেলা নেই। সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সব বিচার রাষ্ট্র করতে পারবে না। কিন্তু কিছু বিচার করতে হয়। সমাজে একটা বার্তা দিতে হয়। মাগুরার শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দাফনের জন্য আজকেই মৃতদেহ হেলিকপ্টারযোগে মাগুরায় নেওয়া হবে। মৃতদেহ ও পরিবারের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার যাবেন। দাফন পর্যন্ত তিনি থাকবেন। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। স্যাম্পল কালেকশন হয়ে হয়েছে। এরই মধ্যে ১২–১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি। সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ধর্ষকদের প্রতিও আমাদের তীব্র ঘৃণা। আমরা সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনাদের কোনো পরামর্শ থাকলে জানাবেন। কিন্তু এই বিষয়কে সামনে রেখে কেউ যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের দিকে নজর দেবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট র ঘটন ন আইন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ