Samakal:
2025-06-16@13:08:44 GMT

বিশ্বরেকর্ডের পথে শাকিল

Published: 14th, March 2025 GMT

বিশ্বরেকর্ডের পথে শাকিল

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছেন পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে হাঁটা শুরু করেছেন। এভারেস্টে আরোহণের পথে তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। সফল হলে এটি হবে পদযাত্রা করে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সবচেয়ে কম সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড।
এর আগে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। ৩৫ বছর আগের ম্যাকার্টনির সেই কৃতিত্ব বেশ অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশের পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিলকে। এই তরুণও তাঁর অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘সি টু সামিট’। 
কক্সবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছান শাকিল। এভাবে ৯০ দিনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯,০৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করবেন। এ অভিযানে তাঁর সঙ্গে আছে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাব। অভিযানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বা টাইটেল স্পনসর হিসেবে আছে প্রাণ গ্রুপ। স্ন্যাক্স পার্টনার হিসেবে আছে মিস্টার নুডলস। গিয়ার পার্টনার হিসেবে আছে মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল। হেলথ পার্টনার হিসেবে আছে সিস্টেমা টুথব্রাশ এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় বেশ কিছু মানুষ, যা সফল হলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ অভিযানের সঙ্গে পরিবেশ সচেতনতার বিষয়ও যুক্ত রয়েছে। শাকিল সম্প্রতি প্লাস্টিকদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় টেকসই সমাধান প্রচারের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ইয়ুথ অ্যাডভোকেট হয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য– দুর্গম অভিযানও পরিবেশের ক্ষতি না করে অভিযান সম্পন্ন করা সম্ভব। এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের এ অভিযানে পথে যেতে যেতে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে আছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা। এ প্রসঙ্গে শাকিল বলেন, ‘এ অভিযান শুধু একটি রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা নয়, এটি প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান। বঙ্গোপসাগর থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পর্যন্ত ভ্রমণের মাধ্যমে আমি মানুষকে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে ভাবাতে এবং সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করতে চাই।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার প্লাস্টিকদূষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘প্লাস্টিকদূষণ আমাদের সময়ের অন্যতম বড় পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, যা জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করছে, সাগরকে দূষিত করছে এবং লাখো মানুষের জীবিকা প্রভাবিত করছে। এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ ও ব্যাপক সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, শাকিলের অভিযান মানুষকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং টেকসই জীবনধারা গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করবে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস গড়ার এই প্রচেষ্টায় তাঁর সফলতা কামনা করি।’
বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘শৃঙ্গজয়ে শাকিলের যে সামর্থ্য আছে, আমরা তাঁর গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল অভিযান দেখেই বুঝেছিলাম। তবে পাহাড়ের সাফল্য নিজের সক্ষমতা ছাড়া আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। ভালো আবহাওয়া তার মধ্যে অন্যতম। তাই শাকিল যত দক্ষই হোন না কেন, শিখর জয় নিশ্চিত নয়।’
অভিযানের সম্পূর্ণ খরচও জোগাড় করতে পারেননি শাকিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ব্যয়বহুল অভিযান। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যা সহযোগিতা পেয়েছি, তা পর্যাপ্ত নয়। আরও ২০ লাখ টাকা লাগবে। বিভিন্নভাবে বাকি টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’
শাকিল হিমালয়ের ‘কেয়াজো-রি’, ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’, ‘ডোলমা খাং’, ‘হিমলুং হিমাল’ ও ‘দ্য গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইল’-এর সাফল্যের পর এখন এভারেস্ট জয়ের পথে। বাংলাদেশ থেকে এভারেস্ট একাধিকবার জয় করা হয়ে গেছে, তারপরও কেন এভারেস্ট জয় করার স্বপ্ন– এমন প্রশ্নের জবাবে ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, ‘আমার কাছে এভারেস্ট ওয়ার্ল্ড কাপের মতো, যা বারবার জয় করা যায়।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাগচালা গ্রামে শাকিলের জন্ম। ২০১৯ সালে বাবা মো.

খবির উদ্দিনের মৃত্যুর পর সংসারের ভার এসে পড়ে শাকিলের ওপর। সংসার ও পড়াশোনার খরচ চালাতে সুপারশপে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন। এই জীবনসংগ্রামের মধ্যেও সৃজনশীল কাজ চালিয়ে গেছেন তিনি। খেলাধুলায় ভালো ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা ছিল শাকিলের। জানান, ‘আমি চাইতাম পত্রিকায় আমার নাম ও ছবি ছাপা হোক। আমি আর দশজন থেকে আলাদা হতে চাইতাম।’ গাজীপুরে ধূমপানের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু। তারপর ২০১০ সালে যোগ দেন পদাতিক নাট্য সংসদ বাংলাদেশে। এই নাট্যদলের হাত ধরেই তাঁর প্রথম ভারতে যাওয়া। ‘নুরু মিয়ার কিচ্ছা’ নামে একটি নাটক লিখেছেন তিনি, তা এখন মঞ্চস্থ করছে পদাতিক।
ক্যামেরার পেছনেও কাজ করছেন তিনি। অনেক টিভি অনুষ্ঠান ও নাটকে সহকারী নির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন। আর নিজে এ পর্যন্ত তৈরি করেছেন পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নিজের অভিযানগুলোর অভিজ্ঞতা পাঠককে শোনাতে কলমও ধরেছেন শাকিল। অভিযান নিয়ে তাঁর লেখা বইগুলো হলো, ‘মাউন্ট কেয়াজো-রি শিখরে বাংলাদেশ’, ‘পদচিহ্ন এঁকে যাই’, ‘পর্বতাভিযানে শ্বাসরুদ্ধকর পনেরো ঘণ্টা’, ‘হিমলুং শিখরে’, ‘দোগারি’, ‘গোমতী থেকে হিমালয়’ এবং ‘হেয়ালী ফেরা’ ও ‘দেবী’। সময় পেলে বিভিন্ন আলোচনা সভায় নিজের এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনান শাকিল।
পাহাড় জয়ের আগে শাকিল আলোচনায় আসেন কলকাতা থেকে ঢাকামুখী পদযাত্রা করে। ২০১৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। তখনই যোগ দেন বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে। পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন ভারত থেকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতার কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে যান এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত পর্বতারোহী। তাদের একজন শাকিল। শেষ পর্যন্ত মুহিত, শাকিল ও কাজী বাহলুল শৃঙ্গটি জয় করেন। ২০১৭ সালে লারকে পিক জয়ের অভিযানেও ছিলেন তিনি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব কাছাকাছি গিয়ে তা জয় করা হয়নি। পরের বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের সময়েই তিনি জয় করেন ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহী ‘হিমলুং’ জয়ের অভিযানে নামেন। সেই দলে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুং-এর চূড়ায় পা রাখেন।
বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের সভাপতি এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিত বলেন, ‘আমি শাকিলকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল পর্বতারোহীদের মধ্য সে সেরা। ও একদিন আমাদেরও ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের সবার উচিত শাকিলের পাশে থাকা এবং তাকে উৎসাহ দেওয়া।’
তবে শাকিলের চোখে এখন শুধুই এভারেস্টের হাতছানি। তিনি বলেন, ‘এভারেস্ট আরোহণ আমার স্বপ্ন। এখন শুধু সেই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছি।’ v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র টন র কর ছ ন র কর ড ক জ কর আম দ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মামলা থেকে বৈষম্যবিরোধী নেতাকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ, ওসির অপসারণ চেয়ে ঝাড়ুমিছিল

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় মাদ্রাসাশিক্ষার্থী শাহরিয়ার শিশিরের (২৪) ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে বিলম্ব, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ফয়সাল মোস্তাকের নামে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর প্রতিবাদ এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও ঝাড়ুমিছিল হয়েছে।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলা শহরের চৌরাস্তা মোড়ে শতাধিক নারী–পুরুষ এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে ঝাড়ু হাতে মিছিল নিয়ে থানার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

মানববন্ধনে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন আহত শাহরিয়ার শিশিরের বাবা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান, সেতাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি নওশাদ আলী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল কারীম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রিয়াদ চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বোচাগঞ্জের মাটিতে একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওসি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেন না। শিশিরের ওপর হামলাকারীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ফয়সাল মোস্তাকের অনুসারী। তাঁর হুকুমেই শিশিরের ওপরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে হামলার ঘটনায় আহত শিশিরের বাবা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নাম এজাহার থেকে বাদ দিতে বাধ্য করেন। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। বক্তারা এ সময় অবিলম্বে বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাসান জাহিদের অপসারণ ও কিশোর গ্যাংয়ের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

৯ জুন দুপুরে উপজেলার সুবিদহাট এলাকার সেতাবগঞ্জ চিনিকল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলতে গেলে শাহরিয়ার শিশির মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে শিশিরের বাবা বোচাগঞ্জ থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে একটি মামলা করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ফয়সাল মোস্তাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় নোংরা রাজনীতি শুরু হয়েছে। উপজেলায় কোথায় কী ঘটছে, তার দায়ভার এসে পড়ছে আমার ওপরে। এখন মনে হচ্ছে এই এলাকায় জন্মগ্রহণ করাটাই আমার পাপ হয়েছে। যাঁরা আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

জানতে চাইলে বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাসান জাহিদ বলেন, ৯ জুন শাহরিয়ার শিশির নামের এক ছেলেকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি সংশ্লিষ্ট আসামিরা আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এখানে নিজেদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়েছে। সংক্ষুব্ধ হয়ে একটি পক্ষ এ ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে নয়, আইন চলে তার নিজস্ব গতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ