ঈদে বাড়ি ফেরার টিকিট যেন সোনার হরিণ হয়ে যায়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে অনলাইনে বাস, লঞ্চ, বিমান ও ট্রেনের টিকিট পাবেন। ইতিমধ্যে অনলাইনে টিকিট বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের পরিবহনব্যবস্থায় বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই যুক্ত হয়েছে অনলাইন টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা।

বাস ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত দু–তিন বছরে অনলাইনে বেড়েছে টিকিট বিক্রি। বেশির ভাগ পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মোট টিকিটের ৫০ শতাংশই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে।

অনলাইন টিকিট বিক্রির অন্যতম মাধ্যম সহজ ডটকমের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। সহজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছর অনলাইনে এই প্রতিষ্ঠান ১০ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি করে। সহজ অনলাইনে টিকিট বিক্রির মাধ্যমগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করে। গত বছর ঈদে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছিল। তবে এ বছর অনলাইনে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সহজ থেকে ঈদের সময় ৮০টি বাস অপারেটরের মতো টিকিট পাওয়া যায়। এবারের ঈদে এই সংখ্যা বেড়ে ১২০টি হয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী অর্ণব গোলদার প্রতিবছর পরিবারের সঙ্গে বরিশালে ঈদ উদ্‌যাপন করতে যান। তিনি জানান, আগে লঞ্চের টিকিট কাটতে এক থেকে দুই দিন সময় লাগত। কিন্তু এখন অনলাইনে টিকিট কাটার সুবিধা থাকায় সহজেই টিকিট কাটা যায়। এবারও তিনি অনলাইনে লঞ্চে ঈদে বাড়ি ফেরার টিকিট কিনেছেন।

বেসরকারি চাকরিজীবী মো.

সানাউল্লাহ প্রতি ঈদেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও যান। গত বছর অনলাইনে টিকিট কাটলেও এ বছর অনলাইনে টিকিট না পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে। তিনি জানান, অনলাইনে টিকিট কাটায় কিছু টাকা বেশি নিলেও ঝামেলা কম হয়।

সোহাগ পরিবহনের টিকিট বিক্রি ভালো। মার্চ মাসের ২৬ থেকে ২৮ তারিখের আগাম টিকিটের ৪৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এই পরিবহন কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় যানজটসহ নানা ধরনের ব্যস্ততার জন্য অনলাইনে টিকিট কিনতে বেশি আগ্রহী। এ জন্য অনলাইনে টিকিট বিক্রি বেড়েছে।

ভিন্ন কথা বলছেন গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। রোজার মাঝামাঝি সময়ে আগে অনলাইনে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। তবে এই বছর এমনটি হয়নি। এখন পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩০ শতাংশ। এ বিষয়ে গ্রিন লাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর বাসাবাড়ি খালি রেখে গ্রামের বাড়িতে যেতে অনেকে এখনো উৎসাহ পাচ্ছেন না। তবে শেষ সময় না এলে বলা যাচ্ছে না এবার কত মানুষ টিকিট কাটবেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। এমন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিবছর অনলাইনে টিকিট কাটার প্রবণতা বাড়ছে।

অনলাইনে যেভাবে টিকিট কাটবেন

অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য দেশে রয়েছে অনেকগুলো মাধ্যম। তবে এর মধ্যে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো হলো সহজ ডটকম, বিডি টিকিটস, বাইটিকিটস ও পরিবহন ডটকম। তাদের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন অ্যাপের মাধ্যমেও টিকিট কাটা যায়। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বাস, লঞ্চ, বিমানসহ সব ধরনের পরিবহনের টিকিট মিলবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেমের (বিআরআইটিএসের) মাধ্যমেও পাওয়া যাবে ট্রেনের টিকিট। ওয়েবসাইট থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন আগে ট্রেনের আগাম টিকিট বুকিং দেওয়া যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে গিয়ে ঘরে বসেই অনলাইনে বিমানের টিকিট কেনা যায়।

অনলাইন টিকিটের এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় নাম–পরিচয়ের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র, মুঠোফোন নম্বর অথবা ই–মেইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এর জন্য অবশ্যই একটি সার্বক্ষণিক ব্যবহৃত ই–মেইল ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর সরবরাহ করা জরুরি। তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিটি পরিবহন মাধ্যমের জন্য আলাদাভাবে রওনা হওয়ার স্থান, গন্তব্য ও যাত্রার তারিখ দেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে। এই তথ্য দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সহজেই টিকিট কেটে নেওয়া যাবে।

মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের পর টিকিটের কপির লিংক পাওয়া যাবে ই–মেইল বা মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে। তারপর সেই টিকিট প্রিন্ট করলেই ব্যবহার করা যাবে টিকিট হিসেবে। বর্তমানে বেশির ভাগ পরিবহনগুলোর নিজস্ব টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখান থেকেও সহজেই টিকিট কাটা সম্ভব।

এ ছাড়া শেয়ার ট্রিপ, গোযায়ান ও ফ্লাইট এক্সপার্ট নামের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইন টিকিটিংয়ের পাশাপাশি হোটেল, ট্যুর ও ভিসা–সংক্রান্ত সুবিধাও পাওয়া যায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর বহন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন মার্কেটপ্লেস এখন হোয়াটসঅ্যাপে

বাংলাদেশি অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় গ্রাহকের জন্য এবার দিয়েছে বিশেষ সুবিধা। এখন থেকে বিজ্ঞাপনের বিস্তারিত পেজ থেকে আগ্রহীরা সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ফিচারটি বিক্রয় ডটকম সাইট ও মোবাইল অ্যাপ– দুই প্ল্যাটফর্মেই সক্রিয় বলে উদ্যোক্তারা জানায়।
নতুন ফিচার দিয়ে ফোনকল ও চ্যাটের সঙ্গে বিক্রয়ের তৃতীয় যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে যুক্ত হলো হোয়াটসঅ্যাপ। বিজ্ঞাপনের নিচে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ বাটনে ক্লিক করলেই প্রি-ফিল্ড (আগে থেকে লেখা) মেসেজের সঙ্গে চ্যাট সক্রিয় হবে, যাতে বিজ্ঞাপনের লিঙ্ক বা তথ্য যুক্ত থাকবে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার যোগাযোগ হবে দ্রুত, সহজ ও ফলপ্রসূ।
বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ।
বিশেষ পরিষেবার ফলে বিক্রেতারা এখন আগ্রহী ও প্রকৃত ক্রেতার কাছ থেকে বার্তা পাবেন, যা তাদের পণ্য বিক্রি প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও সহজ করতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, বিক্রেতার আলাদা কোনো সেটআপের প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞাপনে বিক্রেতার প্রথম যে মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোয়াটসঅ্যাপ যোগাযোগে ব্যবহৃত হবে।
বিক্রয় ডটকমের হেড অব মার্কেটিং মো. আরিফিন হোসাইন বলেন, সব সময় প্রযুক্তিনির্ভর ও সহজে ব্যবহারযোগ্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি। হোয়াটসঅ্যাপ ইন্টিগ্রেশন আমাদের প্ল্যাটফর্মে সময়োপযোগী সংযোজন। শুধু ক্রেতাদের নয়, বিক্রেতার জন্যও বিশেষ সুবিধা। আগের তুলনায় এখন তারা আরও বেশি আগ্রহী ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি বার্তা পাবেন, যা বিক্রির সম্ভাবনা বাড়ানোর 
সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ নিশ্চিত করবে।
ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়াকে সহজ, স্মার্ট ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিক্রয়। হোয়াটসঅ্যাপ ফিচার এমন প্রচেষ্টার আরেকটি উদাহরণ, যা 
ক্রেতা-বিক্রেতার সংযোগকে দ্রুত ও ব্যবহারবান্ধব করবে বলে জানানো হয়।
ডিজিটাল পণ্য বিকিকিনিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখন সময়োপযোগী মাধ্যম। নিজের প্রয়োজনে পণ্য বিক্রি বা ক্রয়ে এমন পরিষেবায় হোয়াটসঅ্যাপ নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলে উদ্যোক্তারা জানায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনলাইন মার্কেটপ্লেস এখন হোয়াটসঅ্যাপে