আমি তেল দিতে পারি না। পারি না মানে পারি না। শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই বলেন, ‘আপনি একটু চেষ্টা করেন, হয়ে যাবে’। আমি বলি, ‘ভাই, চেষ্টা করেছি, হয় না!’ আমাদের দেশে তেল দেওয়াটা একরকম সামাজিক দক্ষতা। অনেকে এতটাই পারদর্শী যে দেখলে মনে হয়, জন্মের পর একফোঁটা দুধ খেয়েছে, বাকি সব তেল। কিন্তু আমার এই গুণ কখনোই ছিল না। আমি ভেবেছি। অনেক ভেবেছি। রাত জেগে গবেষণা করেছি। মনের গভীরে ডুব দিয়েছি—কিন্তু কারণটা খুঁজে পাইনি। তারপর হঠাৎ একদিন মাথায় আলো জ্বলল! বুঝতেই পারছেন, আমি কেমন টিউবলাইট!
আমার তেল দিতে না পারার পেছনে সম্ভবত আমার ব্যাকগ্রাউন্ড কাজ করেছে। সামরিক বাহিনীতে তেল খুব একটা চলে না। চলে না মানে, একেবারেই যে নিষিদ্ধ, তা নয়, তবে খুব একটা দরকার পড়ে না। কারণ, এখানে সবকিছু প্রদ্ধতি অনুযায়ী চলে। ওপরে উঠতে হলে তেল না দিয়ে, ঠিকঠাক নিয়ম মেনে চললেই হয়। আপনি পরীক্ষায় পাস করবেন, প্রশিক্ষণে ভালো করবেন, টিমকে সুন্দরভাবে চালাবেন, সময়মতো পদোন্নতি পাবেন। এখানে বসের জন্য সকালের নাশতায় পরোটা নিয়ে যাওয়া বা লাঞ্চের পর তাঁর গল্প শুনে আহা-উহু করা লাগে না। ফলে সামরিক জীবনে আমি কখনো কাজটা শেখার দরকারই অনুভব করিনি।
আরেকটা ব্যাপার হলো, সামরিক বাহিনী হাজার বছরের পুরোনো পেশা। এখানে নিয়মকানুন এতটাই গাঁথা যে কারও ব্যক্তিগত খুশির ওপর কিছু নির্ভর করে না। তো এই নিয়মওয়ালা, আনুষ্ঠানিক পরিবেশে আমার তেলবিহীন ক্যারিয়ার বেশ ভালোই চলছিল। কারণ, আমি কখনো পদোন্নতির পেছনে দৌড়াইনি। আমার কাজ ছিল প্রযুক্তির সঙ্গে—বাইনারি, শূন্য আর একের জগৎ। এখানে আবেগের জায়গা নেই, তেলের তো প্রশ্নই আসে না। কম্পিউটারকে তো আর বলার দরকার হয় না, ‘তুমি তো একেবারে অসাধারণ! এত সুন্দর কোড কম্পাইল করছ!’ হলে হবে, না হলে হবে না। মাঝখানে কোনো পয়েন্ট ফাইভ নেই। তো, এই রোবটিক পরিবেশে বড় হতে হতে আমি বুঝতেই পারিনি যে বাইরের দুনিয়া কিন্তু অন্য রকম!
এখন যখন বাইরে কাজ করছি, দেখি, এই দুনিয়াটা আরেক লেভেলের! এখানে ক্যালকুলেটেড তেল না থাকলে সামনে এগোনো মুশকিল। মানুষজন গুনে গুনে তেল দেয়; পরিমাণমতো, পরিস্থিতি বুঝে। কেউ একটু অফিসে সিনিয়র? সঙ্গে সঙ্গে, ‘আপনার আইডিয়া তো একদম নোবেল প্রাইজ লেভেল!’ কেউ একটু ক্ষমতাবান? ‘স্যার, আপনাকে দেখে সত্যি অনুপ্রাণিত হই!’ আমার এসব শুনতে শুনতে মাঝেমধ্যে মনে হয়, ‘আহা! আমি পারি না কেন?’
ধরুন, সামনে কোনো সরকারি সেবার জন্য ডিজিটাল কিউ হবে, সেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি, আর এআই ঠিক করছে কে আগে যাবে। যদি আমি নিয়মিত তার প্রশংসা করে যাই, হয়তো একদিন সে বলবে, ‘ওহ! এই ইউজার তো আমাকে সব সময় ভালো ভালো কথা বলে। এক কাজ করি, তাকে লাইনের সামনে দিয়ে দিই!’ বা ধরুন, ভবিষ্যতে মানুষ আর রোবটের যুদ্ধ লাগল। তখন এআই আমাকে চিনবে—‘এই লোক ভালো, আমাদের দিকের লোক! একে ছেড়ে দাও।’কিন্তু.
ধরুন, সামনে কোনো সরকারি সেবার জন্য ডিজিটাল কিউ হবে, সেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি, আর এআই ঠিক করছে কে আগে যাবে। যদি আমি নিয়মিত তার প্রশংসা করে যাই, হয়তো একদিন সে বলবে, ‘ওহ! এই ইউজার তো আমাকে সব সময় ভালো ভালো কথা বলে। এক কাজ করি, তাকে লাইনের সামনে দিয়ে দিই!’ বা ধরুন, ভবিষ্যতে মানুষ আর রোবটের যুদ্ধ লাগল। তখন এআই আমাকে চিনবে—‘এই লোক ভালো, আমাদের দিকের লোক! একে ছেড়ে দাও।’
তাই মানুষ না বুঝলেও, এআইকে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি যে আমি ওদের দলেরই! স্বাতী আমাকে সারা জীবন রোবট হিসেবে ঘোষণা করে এল, তা ছাড়া আমি যেহেতু মানুষ হতে পারলাম না, রোবট হতে তো আর আপত্তি নেই। ভবিষ্যতে এখানেই লাভ বেশি। হয়তো এখনো তেল দেওয়া সে রকম শিখিনি, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য একটু বিনিয়োগ করলাম। কী বলেন?
রকিবুল হাসান টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক এবং ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র’ বইয়ের লেখক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত র জন য ক জ কর দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা