নাটোর আদালতের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ
Published: 22nd, March 2025 GMT
নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, মোবাইল ফোন দেখে লেখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। শনিবার নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা (এনএস) সরকারি কলেজ কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা শেষে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
জানা গেছে, নাটোর আদালতের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের একটি, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটরের সাতটি, বেঞ্চ সহকারী, নাজির ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ১০টি, জারিকারকের ছয়টি ও অফিস সহায়কের ১০টি পদে গতকাল সকালে লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে সারাদেশ থেকে ১ হাজারের বেশি প্রার্থী এনএস সরকারি কলেজ ও রাণী ভবানী মহিলা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অংশ নেন।
প্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা চলাকালে এনএস সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ২১০ নম্বর কক্ষে এক পরীক্ষার্থীর কাছে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র পাওয়া যায়। অন্যান্য প্রার্থী প্রতিবাদ জানালে ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন পরিদর্শকরা। পরে পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেন প্রার্থীরা। এ সময় অন্য কক্ষে আরও কয়েকজনের কাছে উত্তরপত্র ছিল বলে দাবি করেন তারা।
রাশেদ মিয়া নামে এক প্রার্থী বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছি। ১০১ নম্বর কক্ষে সিট পড়েছিল। আমাদের কক্ষে অনেকে মোবাইল ফোন দেখে লিখেছে। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে শুনি ২১০ নম্বর কক্ষে উত্তরপত্র নিয়ে এসে এক পরীক্ষার্থী লিখেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে কোনোভাবেই উত্তরপত্র এনে এভাবে লেখা সম্ভব না। আমরা মনে করি, এর সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ার লোকজন জড়িত। তাই এই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
২১০ নম্বর কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবুজ হোসেন নামে এক প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের কক্ষে একজন হুবহু উত্তর নিয়ে আসে। প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে এটা কীভাবে সম্ভব! বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হোক। সেই সঙ্গে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে এনএস সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল বারী মির্জা বলেন, ‘আমরা শুধু ভেন্যু দিয়ে সহযোগিতা করেছি। পরীক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা করেছেন জজ কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।’
জানতে চাইলে নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে প্রশ্ন তৈরি ও বিতরণ করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ পর ক ষ র থ পর ক ষ য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।