জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম এবং তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে জামালপুরে থাকা ১৯ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এসব হিসাবে ৩ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৮ টাকা রয়েছে।

সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। 

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মির্জা আজম এবং তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে পৃথক দুটি আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন দুটি মঞ্জুর করেন।

জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে মির্জা আজমের নামে জামালপুরে সাড়ে ৫৯ শতক জমিও হয়েছে। এসব সম্পদের মূল্য ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মির্জা আজমের নামে ১৮ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ১ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪ টাকা।

এ ছাড়া মির্জা আজমের স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে জামালপুরে ১৭ দশমিক ৯২ বিঘা অর্থাৎ প্রায় ১৮ বিঘা জমি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ২ কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার ৯২৪ টাকা রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।

মির্জা আজমের আবেদনে বলা হয়, মির্জা আজম সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা এবং তার মেয়ে আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পত্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ পন্থা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেন। 

এসব সম্পদ নিজের দখলে রেখে, পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্যদের নামে ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি হেবা বা দান বা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেন। নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান এবং তার স্ত্রী আসামি দেওয়ান আলেয়াসহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান এর নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ লাখ ২৩২ টাকা জমা ও ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলনপূর্বক অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে তার অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করে। 

মির্জা আজম কর্তৃক অর্জিত সকল সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে প্রাপ্ত তার নিজ নামীয় ও তার কন্যা মির্জা আফিয়া আজমের নামীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) যেন তিনি অন্যত্র হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সেজন্য তার এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

দেওয়ার আলেয়ার আবেদনে বলা হয়, দেওয়ার আলেয়া তার স্বামী মির্জা আজমের প্রভাব খাটিয়ে এবং তার সহযোগিতায় নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজান ৯৯৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পত্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ পন্থা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেন।

তা নিজের দখলে রেখে এবং তার নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১৮১ কোটি ৯৫ লাখ, ৬২ হাজার টাকা জমা ও ১৭৯ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯ টাকা উত্তোলনপূর্বক অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে তার অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন এজন্য দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। 

আসামি দেওয়ান আলেয়া কর্তৃক অর্জিত সকল সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে প্রাপ্ত তার নিজ নামীয়/স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) যেন তিনি অন্যত্র হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, এজন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

৭২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মির্জা আজম এবং তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

এর আগে ২৩ অক্টোবর মির্জা আজমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন একই আদালত।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক হ স ব অবর দ ধ আল য় র আজম র এসব স

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ