Samakal:
2025-08-01@21:55:08 GMT

‘আগের চেয়ে ভালো লাগছে’

Published: 25th, March 2025 GMT

‘আগের চেয়ে ভালো লাগছে’

যে ভুল করেন অনেকেই– বুকে চাপা ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ধরে নেন। গতকাল ঢাকা লিগের ম্যাচ খেলতে সাভারের বিকেএসপির মাঠে গিয়ে তামিম ইকবাল তেমনটা ভেবেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারেন, ব্যথাটা বেড়ে মুখের দিকে উঠে আসছে। এর পরই মোহামেডানের ফিজিও-চিকিৎসকরা তাঁকে নিয়ে বিকেএসপির পাশে কেপিজে হাসপাতালে যান। ঢাকা থেকেও হেলিকপ্টার আনা হয় বিকেএসপিতে। কিন্তু সেই হেলিকপ্টারের কাছে নিয়ে আসতেই আবার জ্ঞান হারান তামিম। এর পর ওই হাসপাতালে ফিরে গিয়ে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট (রিং) পরানো হয় তামিমের।

গুরুতর অবস্থায় দ্রুততার সঙ্গে স্টেন্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। যখন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখনও কেপিজে হাসপাতালে এসে পৌঁছাতে পারেননি তামিমের পরিবারের কোনো সদস্য। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেশনের সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করেন ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল। জানা গেছে, ডাক্তারদের দ্রুত এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণেই বড় ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে গেছেন তামিম। স্টেন্ট বসানোর পর এখন অনেকটা সুস্থ আছেন এবং পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। চোখ খুলেছেন এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডাক্তারকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আগের চেয়ে ভালো লাগছে।’ এদিন মাঠ থেকে তামিমের হার্ট অ্যাটাকের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পুরো ক্রীড়াঙ্গন। ১৯তম বোর্ড সভা স্থগিত করে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমরা ছুটে যান সাভারের ওই হাসপাতালে।

কী হয়েছিল মাঠে
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে সকাল ৯টায় মোহামেডান অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও শাইনপুকুর অধিনায়ক রায়ান রাফসানকে নিয়ে টস করতে নেমেছিলেন ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল। তখন তামিমের সঙ্গে কথাও হয় দেবব্রতর। তবে টসের আগে ওয়ার্মআপের সময় কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন তামিম। টস করে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় সেটা আরও বাড়ে। মোহামেডান কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে তিনি তখন জানান, তাঁর সম্ভবত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে। তরিকুল তাঁকে ড্রেসিংরুমে বিশ্রাম নিতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তামিমের অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। তারকা এ ওপেনার তরিকুলকে জানান, তাঁর খুব খারাপ লাগছে, ব্যথা বেড়ে মুখের দিকে উঠে এসেছে। কালবিলম্ব না করে তামিমকে বিকেএসপির কাছে কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কখন হাসপাতালে নেওয়া হয়
সকাল ৯টা ২২ মিনিটে মোহামেডানের ফিজিও এনাম ম্যাচ রেফারি দেবব্রতকে ফোন করে জানান, বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টায় তাঁকে ছাড়া খেলতে নামে মোহামেডান। হাসপাতালে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ইসিজি ও আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়। তখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি যে তামিমের কী হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় যোগাযোগ করে বিকেএসপিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উড়িয়ে আনা হয়। কেপিজে হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে কিছু ধরা না পড়ায় ঢাকায় গিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা ছিল তামিমের। কিন্তু কেপিজে হাসপাতাল থেকে বিকেএসপিতে ফিরে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তামিম। দেবব্রত পাল জানান, তখন তাঁর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সঙ্গে থাকা বিকেএসপির চিকিৎসক পরামর্শ দেন, অবস্থা খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা নিতে নিতে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তার চেয়ে হাতের কাছে থাকা হাসপাতালে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তামিমকে আবার কেপিজে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাওয়ার পুরোটা সময় বিরামহীনভাবে তামিমের বুকে পাঞ্চ করে (সিপিআর) যান মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী। তখন তামিমের অবস্থা ভীষণ সংকটাপন্ন ছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। কারও ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন না বলে সতীর্থ কয়েকজন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বলেও জানা যায়।

ডাক্তাররা কী বললেন
দ্বিতীয়বার হাসপাতালে নিয়েই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তামিমকে। এর মধ্যে তামিমের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে চলে আসেন। কেপিজে হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তাঁর এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট করানো হয়। এনজিওগ্রামে তামিমের হৃদযন্ত্রে একটি ব্লক ধরা পড়লে তখনই তাঁকে রিং (স্টেন্ট) পরানো হয়। কেপিজে হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার রাজীব হাসান গণমাধ্যমে তামিমের অবস্থা নিয়ে বলেন, ‘তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এটার জন্য এনজিওগ্রাম করে এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট করানো হয়েছে। স্টেন্টিং খুব স্মুথ ও কার্যকরভাবে হয়েছে। এটা করেছেন ডা.

মনিরুজ্জামান মারুফ। তাঁর ব্লক পুরোপুরি চলে গেছে। তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন। এখনও গুরুতর অবস্থা কাটেনি।’ বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন, তামিমের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর তিনি পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামী ৪৮ ঘণ্টা তামিম চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এর মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের সিসিইউতে আছেন তামিম। সঙ্গে আছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা।

বিসিবি থেকে অনুরোধ
তামিমের অসুস্থতার বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দ্রুত চিকিৎসায় সহায়তা করার জন্য বিকেএসপি ও কেপিজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সে সঙ্গে তামিমের ভক্ত-সমর্থকদের অযথা হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। তামিমের জন্য দোয়া করার অনুরোধও করা হয়েছে।

উদ্বিগ্ন সবাই
দেশের ক্রীড়াঙ্গন তো বটেই, দেশের বাইরে থেকে সাবেক ক্রিকেটার যুবরাজ সিং, লাসিথ মালিঙ্গা, মনোজ তিওয়ারি, ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে তামিমের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন। বিসিবি থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কার্যালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সার্বক্ষণিক তামিমের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ম ম ইকব ল ব ক এসপ র পর ব র র র অবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ