কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন, পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার
Published: 26th, March 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মেহেদী ও রবিন নামের দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরে ডিশ ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে হত্যা। মেহেদী গ্রুপের প্রধান মেহেদীর নির্দেশে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে বড় সাঈদ। এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজনের ‘কিলার গ্রুপ’। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ মার্চ সুমনের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে তারা।
এ ঘটনার মূল হোতা ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদ এবং কিলার মামুন ওরফে বেলালকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার এসব তথ্য জানায় র্যাব।
সংস্থাটি আরও জানায়, ঘটনার ৮–১০ দিন আগে বড় সাঈদের নির্দেশে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪–৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে কিলার গ্রুপ গঠন করা হয়। তারা প্রতিদিন সুমনের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সাঈদের বাসায় মিটিং করে কিলার গ্রুপ এবং তার বাসা থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায়। ওই রাতে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে সুমনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করেই পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
র্যাব ১–এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সালমান নূর আলম জানান, রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী সুমনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পরদিন গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার র্যাব ৮–এর সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বড় সাঈদকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাঈদ জানান, বেলালসহ আরও কয়েকজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। তার দেওয়া তথ্যমতে ওইদিন রাতেই বেলালকে গাজীপুর টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।
র্যাব ১–এর এ কর্মকর্তা বলেন, বড় সাঈদের মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বিগত কয়েক বছর গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসা মেহেদী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে যায়। এরপর তার বাহিনীর সদস্যরা বড় সাঈদের মাধ্যমে ওই এলাকায় চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। কিন্তু রবিন গ্রুপের হয়ে সুমন গুলশান–বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করে। চাঁদাবাজির নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে রবিন গ্রুপের সুমনের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এতে সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সাঈদ।
নিহত সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। তার বাবার নাম মাহফুজুর রহমান। তিনি রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য স ঈদ র স মন র এল ক য় স মনক ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত