দুই দিন ধরে রাজশাহীতে চলছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। সূর্যের তেজে সকাল থেকেই পুড়ে উঠছে পথঘাট। এর সঙ্গে বইছে লু হাওয়া, যা জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের বাজারের উদ্দেশ্যে মানুষ বের হলেও, সাধারণ মানুষ শহরের রাস্তায় খুব কমই বের হচ্ছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.

৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ভোর ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন, শুক্রবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রাজশাহীর চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।

আবহাওয়া অফিস জানায়, কোনো এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটি মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য হয়। সে অনুযায়ী, রাজশাহীতে দুই দিন ধরে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। এর আগে, গত শুক্রবার ছিল মৃদু তাপপ্রবাহ।

শনিবার দুপুরে নগরের দড়িখড়বোনা এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক মো. সাইফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সকাল থেকেই রাস্তার পিচ গরম হয়ে যাচ্ছে। একটু বেলা বাড়লেই তাপে মনে হচ্ছে গা পুড়ে যাচ্ছে। তবে বিশ্রাম নেয়া সম্ভব নয়। ঈদে টাকার দরকার, তাই বেরিয়েছি।”

রেলগেট এলাকায় আখের রস বিক্রেতা তুহিন আলী জানান, “রোজার শুরু থেকেই রসের চাহিদা বেশি। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। সারাদিন রোজা রেখে মানুষ এই তাপে তৃপ্তি পেতে আখের রস কিনে নিচ্ছেন। তবে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করতে আমারও হাঁসফাঁস লেগে যাচ্ছে।”

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন জানান, রাজশাহীতে সর্বশেষ ২১ ও ২২ মার্চ ৮.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২৩ মার্চ থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, গরমের তীব্রতা কমেনি।

ঢাকা/কেয়া/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স লস য় স

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ