গরুর মাংসের বাজার চড়া, কেজিপ্রতি দাম উঠেছে ৮৫০ টাকা
Published: 30th, March 2025 GMT
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে ঈদের আগমুহূর্তে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। তবে অন্যান্য বাজারে আরও ১০০-১২০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর মাংসের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও বাজার ঘুরে গরুর মাংসের দামের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। সাধারণত চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবের পরদিনই বাংলাদেশে ঈদ হয়। সে চিন্তা করে অনেকেই ঈদের বাজার করছেন আজ। তাই গরুর মাংসের দোকানেও ভিড় দেখা গেছে।
ঈদের আগে এখন মানুষ শেষ মুহূর্তের প্রয়োজনীয় বাজার সারছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় দেখা গেছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস বিক্রির দোকানে। বাজারভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৮৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
আজ রাজধানীর চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অনেকেই সাধ্যমতো গরুর মাংস কিনছেন। খাসি ও ছাগলের মাংসের চাহিদা কম হলেও ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির বেচাকেনাও অনেক বেড়েছে।
বিক্রেতারা জানান, গত দুই দিনের মধ্যে বাজারভেদে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আজ ঢাকার শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এসব বাজারের মধ্যে টাউন হল বাজারে ৮৫০ টাকা, শেওড়াপাড়ায় ৮০০ টাকা, কৃষি মার্কেটে ৭০০ টাকা, আগারগাঁওয়ের খোলাবাজারে ৬৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। মোটামুটি এক দামেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। চাহিদা বেশি থাকায় দর-কষাকষির সুযোগ কম।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার মাংসের দোকানগুলোয় ৮৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এত বেশি দাম কেন জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো বিক্রেতা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করে এক মাংস বিক্রেতা বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় টাউন হল বাজারের দাম একটু বেশি থাকে। স্বাভাবিক সময়ে এ বাজারে ৭৫০-৮০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হতো, এখন সেটি বেড়ে ৮৫০ টাকায় উঠেছে।
সকালে টাউন হল বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম। মাংসের বেশি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল ঈদ হতে পারে। আজ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এ বাজার (টাউন হল) থেকে কিনেছি। এখন গরুর মাংস কিনতে এসে দেখি ৮৫০ টাকা কেজি। এটা তো অনেক বেশি দাম। এখন অন্য বাজারেও যেতে পারছি না দেখে বাধ্য হয়ে এ দামে মাংস কিনতে হচ্ছে।’
নিম্ন আয়ের মানুষেরাও কিনছেনরাজধানীর আগারগাঁওয়ে সঙ্গীত কলেজের পাশে একটি অস্থায়ী কাঁচাবাজার রয়েছে। এ বাজারে আজ এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা। সকাল ১০টির দিকে বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এখানে গরুর মাংস কেনার জন্য ভিড় করেছেন। তাঁদেরই একজন ৬০ বছর বয়সী রীনা খাতুন।০
মিরপুরের ৬০ ফিট সড়কের ছয়তলা গার্মেন্টসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকেন রীনা খাতুন। তাঁর পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী আবুল কালাম রিকশাচালক। সপ্তাহ দুই আগে রীনা খাতুন হাতের হাড়ে ব্যথা পান। সেটির চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। জমানো সেই টাকা নিয়েই গরুর মাংস কিনতে আসেন তিনি।
রীনা খাতুন বলেন, ‘আগামীকাল ঈদ হতে পারে। ঈদের দিন এক কেজি মাংস পরিবারের সবাই মিলে খাব। এখানে কিছুটা কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হয় শুনে এসেছি।’
মাংসের দাম তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে একটি দোকানের বিক্রেতা মো.
এদিকে মাংস বিক্রেতারা জানান, ঈদ কেন্দ্র করে গরুর মাংসের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মাংস বিক্রেতা মঞ্জুর আলম বলেন, প্রতিবছরই ঈদের আগে বেচাকেনা তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পায়। এবারও তা-ই হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল শনিবার মোট পাঁচটি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে তাঁর দোকানে। আর আজ বেলা ১১টার মধ্যেই পাঁচটি গরু বিক্রি শেষ হয়েছে।
খাসির মাংসের দামও চড়াবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজ প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। যেমন ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আবার আগারগাঁও তালতালা ও টাউন হল বাজারে সেটি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিসমিল্লাহ খাসির মাংসের দোকানের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, এবারের ঈদে অন্যান্য বছরের তুলনায় খাসি ও ছাগলের মাংস আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, দাম বেশি। ফলে অনেকেই পরিমাণে কম কিনছেন বা গরু কিনছেন। ঈদ উপলক্ষে খাসি ও ছাগলের মাংসে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এটি সত্ত্বেও ঈদের কারণে বিক্রি বেড়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আজ বেলা থেকে ১১টা পর্যন্ত দোকানে ১৩টি ছাগল ও খাসি বিক্রি হয়েছে। গতকাল ১৯টি বিক্রি হয়েছিল। স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে পাঁচটির মতো বিক্রি হয়।
ব্রয়লারের কেজি ২৩০ টাকাঈদের আগের দিন আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির দাম রাখা হচ্ছে ৩৩০ টাকা। অবশ্য পাড়া-মহল্লায় এ দাম কেজিতে আরও ১০ টাকা বেশি দেখা গেছে। আর কারওয়ান বাজারে দাম ১০ টাকা করে কম রয়েছে। সব কটি বাজারেই মুরগির দোকানেও ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ক ষ র ম হ ম মদপ র ৮৫০ ট ক ম রগ র স ক নত করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?