দুই টেস্ট খেলেই অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে কনস্টাস
Published: 1st, April 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়দের তালিকা আজ মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল ওপেনার স্যাম কনস্টাস। তবে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক জায়গা পাননি।
কনস্টাসের পাশাপাশি অলরাউন্ডার বো ওয়েবস্টারও প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই অসাধারণ দক্ষতার জন্য পরিচিত ওয়েবস্টার বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে মিচেল মার্শের পরিবর্তে খেলেছিলেন।
কনস্টাস নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচেই নজর কেড়েছিলেন। বিশেষ করে ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামলানোর মাধ্যমে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবাদে অভিজ্ঞ স্পিনার ম্যাথু কুহনেমান পুনরায় কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পেয়েছেন।
আরো পড়ুন:
অশ্বিনীর বোলিং তোপে ১১৬ রানেই অলআউট কলকাতা
ঈদ শুভেচ্ছায় যে বার্তা দিলেন ক্রিকেটাররা
অপরদিকে, জাতীয় দলে ধারাবাহিকতা না থাকায় জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক চুক্তিতে জায়গা পাননি। এছাড়া শন অ্যাবট, অ্যারন হার্ডি ও টড মারফিকেও এবার কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তালিকার বাকি অংশে পরিচিত মুখেরাই রয়েছেন। প্যাট কামিন্স, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্র্যাভিস হেড, মিচেল মার্শ, ন্যাথান লায়ন, অ্যাডাম জাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলসহ আরও কয়েকজন তারকা তাদের জায়গা ধরে রেখেছেন।
সম্প্রতি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ২০২৫-২৬ মৌসুমের ব্যস্ত সূচি ঘোষণা করেছে। এই সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলবে। এরপর ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজ সিরিজে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের।
অস্ট্রেলিয়ার ২০২৫-২৬ কেন্দ্রীয় চুক্তিভূক্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:
প্যাট কামিন্স, স্টিভেন স্মিথ, ন্যাথান লায়ন, অ্যালেক্স ক্যারি, স্যাম কনস্টাস, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক, ন্যাথান এলিস, ঝাই রিচার্ডসন, স্কট বোল্যান্ড, ল্যান্স মরিস, ম্যাথু কুহনেমান, অ্যাডাম জাম্পা, ট্র্যাভিস হেড, ম্যাট শর্ট, জশ ইংলিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্নাস লাবুশেন, উসমান খাজা, মিচেল মার্শ, বো ওয়েবস্টার, ক্যামেরন গ্রিন ও জেভিয়ার বার্টলেট।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।
জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।
বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।
এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।