বরগুনার আমতলীতে মাদকের টাকা না পেয়ে পলি বেগম (৪৫) নামের এক গৃহবধূকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার উপজেলার দক্ষিণ টেপুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই নারী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন।

অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম সাইদুর রহমান। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ও একটি সরকারি হাসপাতালে অফিস সহায়কের কাজ করতেন। ২০২০ সালে সেখান থেকে অবসর নেন তিনি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও স্বজনের ভাষ্য, চাকরিরত অবস্থায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন সাইদুর। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে প্রায়ই স্ত্রী পলি বেগমের ওপর নির্যাতন চালাতেন। গতকাল বিকেলে পলির কাছে মাদকদ্রব্য কেনার জন্য টাকা দাবি করেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম করেন সাইদুর। এতে পলির ডান হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে পাশের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে থেকে তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।

সাইদুর রহমানের চাচাতো ভাই ও মাদ্রাসার শিক্ষক জসিম মৃধা বলেন, সাইদুর ২০ বছর ধরে মাদক সেবন করে আসছেন। মাদকের টাকা না পেলে স্ত্রীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন। এই নেশার কারণে তাঁকে অনেক স্থানে জরিমানা দিতে হয়েছে।

সাইদুর ও পলি দম্পতির ছেলে আসাদুর রহমান আজ শনিবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল রাতে নিটোরে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে সেখানে নিতে দেরি হওয়ায় হাতটি সংযোজন করা যায়নি। ঘটনার ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে যেতে পারলে হাতটি জোড়া লাগানো যেত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার মাথায় একটু সমস্যা আছে। এ কারণে তিনি এই আচরণ করেছেন। মা এখন মোটামুটি সুস্থ।’

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আসামিকে আপ্যায়নের ঘটনায় আদালত পরিদর্শকসহ ৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার আসামি এবং আমতলী পৌর যুবলীগ সভাপতিকে পুলিশের ব্যারাকে নিয়ে আপ্যায়নের অভিযোগে আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক বশির আলমসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন এ টি এস আই মামুন, কনস্টেবল আশিস, মো. ফয়সাল, সোহরাব মিয়া ও শাহদাত হোসেন। তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে আদালত থেকে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বরগুনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর আমতলীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ ব্যারাকে মামলার আসামি আরিফ-উল হাসানকে ভাত খাওয়ান আদালত পরিদর্শক বশির আলম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ব্যারাকের ভেতরে দুজন নারী, দুজন পুরুষ এবং একটি শিশু ছিল। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও প্রকাশের পর আসামিকে আপ্যায়নের অভিযোগে আদালত পরিদর্শক বশির আলমসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, আমতলীতে আদালতের গারদখানার সংস্কারকাজ চলায় আসামিকে পুলিশ ব্যারাকে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখানে তাঁর খাবারের আয়োজন করা হয়। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তাঁদের নির্দেশে ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামিকে আপ্যায়নের ঘটনায় আদালত পরিদর্শকসহ ৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার