যাত্রীদের বাঁচাতে ভাঙা চোয়াল নিয়ে ৪০ কি.মি. বাস চালিয়ে থানায় চালক
Published: 5th, April 2025 GMT
গত সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন মধ্যরাতে চল্লিশজন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয় একুশে পরিবহনের একটি বাস। পথে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পার হলে প্রায় ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে একদল যুবক বাসটিকে অনুসরণ করতে শুরু করে। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ ধাওয়া করেও বাসটিকে ধরতে না পেরে লোকালয়ে আসার আগেই ফিরে যায় যুবকেরা। তবে তার আগে তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে বাস চালকের চোয়াল ভেঙে যায়, মাথায় ও বুকে গুরুতর আঘাত পান বাস চালক মো.
বাসটিকে ধরতে না পেরে যুবকেরা প্রথমে বিপুলাসার বাজারে অবস্থান নেয়। বাসের সামনের কাচে বড় ইট ছুঁড়ে মারেন। এতে বাসের কাচ ভেঙে গেলেও চালক আঘাত থেকে বেঁচে যান। মোটরসাইকেল নিয়ে ওই যুবকেরা পুনরায় তাড়া করে নোয়াখালীর সীমানা সেনবাগের ছাতারপাইয়ায় এসে আবারও ইট নিক্ষেপ করে। এতে চালক সোহেলের চোয়াল ভেঙে যায় এবং মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পান।
তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই অবস্থায় দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে তিনি নোয়াখালী জেলা শহরে পৌঁছান এবং সুধারাম মডেল থানার সামনে বাস দাঁড় করান। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান যাত্রীরা। খবর পেয়ে বাসের মালিক দ্রুত চালককে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চালক সোহেল বলেন, “তারা প্রথমে অনুসরণ শুরু করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পার হওয়ার পর। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। লালমাই আসার পর তারা যখন আমাকে থামার জন্য সিগন্যাল দিচ্ছিল, তখন যাত্রীরা দেখে মোটরসাইকেলগুলো নাম্বারবিহীন। এরপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিই। তারাও বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ওভারটেক করে সামনে আসার চেষ্টা করে। লাকসাম এসে আমাকে গাড়ি থামানোর জন্য আবারও সিগন্যাল দেয়। কিন্তু গাড়ি থামাইনি। কারণ, আমার গাড়ির ভিতরে চল্লিশজন যাত্রী। গাড়ি না থামানোর কারণে প্রথমে বিপুলাসার এসে তারা আমাকে সামনের গ্লাসে দিয়ে ইট মেরে আমাকে আঘাত করে। পুনরায় ছাতাপাইয়ায় আবারও ইট মারলে আমার চোয়াল ভেঙে যায়। তারপরও ঘাবড়ে না গিয়ে রক্তক্ষরণরত অবস্থায় আমি গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে চলে আসি।”
মো. হামিম নামে একজন যাত্রী বলেন, “যুবকদের প্রত্যেকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। তারা খুব আক্রমণাত্মক ছিল। খুব সম্ভবত কোনো অপরাধ ঘটনোর জন্য তারা বাসটিকে আটকাতে চাচ্ছিল। চালক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চল্লিশ জন যাত্রীকে নিরাপদে নিয়ে আসলেন। আমরা চালকের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
বাসের মালিক জহিরুল ইসলাম তারেক বলেন, “কয়েকটি মোটরসাইকেল গাড়ি থামানোর জন্য সিগন্যাল দিচ্ছিল। কিন্তু চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে নোয়াখালীর দিকে আসছিল। তারাও বাসের পিছু নিয়ে তাড়া করছিল। একট পর্যায়ে বিপুলাসার এসে প্রথমে চালককে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। এতে চালকের কিছু না হওয়ায় দ্বিতীয় বারের অঘাতে চালকের চোয়াল ভেঙে যায়। ঘটনা শোনার পর আমি বাসের সুপারভাইজারকে বলি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে আনার জন্য। কোথাও যেন না দাঁড়ায়। জেলা শহরে আসার পর যাত্রীরা থানার ভিতরে আশ্রয় নেন, আমি চালককে নিয়ে হাসপাতালে যাই। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি তার চিকিৎসার জন্য।”
বাসের মালিক আরো বলেন, “ঘটনার পর নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানায় যাই ডায়েরি করার জন্য। সেখান থেকে বলা হয় সোনাইমুড়ি থানায় যেতে। সোনাইমুড়ি থানায় গেলে বলা হয় লাকসাম থানায় যেতে।”
এদিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রাজিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, “১ তারিখ রাত আড়াইটর দিকে চালক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় তার মুখমণ্ডলে ফ্রাকচার হয়েছে। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছেন এবং পরবর্তী নির্দেশনা দিয়েছেন। বর্তমানে রোগী মোটামুটি ভালো আছেন। তবে মুখমণ্ডলের আঘাত সারতে সময় লাগবে।”
নোয়াখালী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, “গাড়ির মালিক আমার কাছে এসেছিলেন। এখনো এ বিষয়ে অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সুজন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র জন য জন য ত র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ