মার্কিন পণ্য আমদানিতে গড় শুল্ক ৬ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি শুল্ক মদে
Published: 6th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছর বাংলাদেশে যত পণ্য আমদানি হয়েছে, তার গড় শুল্কহার ছিল ৬ শতাংশ। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ টাকার পণ্য আমদানিতে সরকার গড়ে শুল্ক–কর আদায় করেছে ৬ টাকা ১৫ পয়সা। অবশ্য আমদানি পর্যায়ে আদায় হওয়া মূল্য সংযোজন কর, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর—এই তিনটি পরে সমন্বয় করে নেন ব্যবসায়ীরা। সমন্বয় করা হয় এমন তিনটি কর বাদ দিলে কার্যত গড় শুল্কহার দাঁড়ায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশভেদে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপর সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের শুল্ক–কর কমানোর পর্যালোচনার ঘোষণা দেয়। এতে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে গড় শুল্ক–কর কত, কোন পণ্যে কত শুল্কহার—এমন বিষয়গুলো আবারও সামনে এসেছে।
পাল্টা শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প বাণিজ্য–ঘাটতি ও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির হিসাব বিবেচনায় নিয়েছেন। ট্রাম্পের সূত্র অনুযায়ী, পাল্টা শুল্ক কমাতে হলে বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনতে হলে সহজপথ হলো মার্কিন পণ্যে শুল্কছাড়। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কাজ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে কী করা যেতে পারে, তা চিন্তা করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার এ নিয়ে এনবিআরে বৈঠক হবে।
মার্কিন পণ্যে গড় শুল্ক ৬ শতাংশপ্রথম আলোর হাতে থাকা এনবিআরের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছর বাংলাদেশ ২৯১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৩৫ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। এসব পণ্য থেকে মোট শুল্ক–কর আদায় হয়েছে ২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ গড়ে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলত দুই শ্রেণিতে পণ্য আমদানি হয়। একটি হলো বন্ডের আওতায় আনা রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল। আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি করা পণ্য। গত বছর রপ্তানি কাঁচামাল আমদানি হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ডলারের, যেগুলোর জন্য শুল্ক–কর দিতে হয়নি। আবার অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি করা ২৬১ কোটি ডলার পণ্যের মধ্যে শুল্ক–কর দিতে হয়নি এমন পণ্যের আমদানি ছিল ৭৯ কোটি ডলারের।
সর্বোচ্চ শুল্ক ৬১১%গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ হাজার ৫১৫টি এইচএসকোডের (পণ্যের শ্রেণি বিভাজন) পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক–করের হার ছিল ৬১১ শতাংশ। সর্বনিম্ন হার ছিল শূন্য শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া সর্বোচ্চ শুল্ক–কর আছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে হুইস্কি। হুইস্কিতে শুল্ক–কর ৬১১ শতাংশ। তবে আমদানি খুবই কম। গত বছর ২২৮ বোতল জ্যাক ডেনিয়েল হুইস্কি আমদানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর বিপরীতে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শুল্ক–করযুক্ত পণ্য হলো মার্সিডিজ বেঞ্জ। এ গাড়িতে শুল্ক–কর ৪৪৩ শতাংশ। গত বছর আমদানি হয়েছে চারটি মার্সিডিজ বেঞ্জ। এর বিপরীতে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ শুল্ক–করযুক্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভ্যাপ ও ই–সিগারেটে। এসব পণ্যে শুল্ক–কর ২৮৯ শতাংশ। গত বছর মাত্র ৭৩ হাজার ডলারের ভ্যাপ ও ই–সিগারেট আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে তিন কোটি টাকা।
চতুর্থ সর্বোচ্চ শুল্ক–করযুক্ত পণ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও গাড়ি (১৬০০ থেকে ২০০০ হাজার সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি)। এ ধরনের পণ্য আমদানি থেকে শুল্ক–কর আদায় হয়েছে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় পুরোনো লোহার টুকরা থেকে। রড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে এসব লোহার টুকরা আমদানি করা হয়। প্রতি মেট্রিক টনে নির্ধারিত শুল্ক আদায় হয়। তাতে শুল্কহার ৪ শতাংশ পড়ে। গত বছর ৪৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে এই খাত থেকে।
কোথায় কমতে পারেশুল্ক–করের হার সব দেশেই প্রায় একই। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় (যেমন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা সাফটা) নির্ধারিত পণ্যে শুল্ক সুবিধা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সরকার কোন পণ্যে শুল্কহার পর্যালোচনা করবে, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। শুল্ক–কর কমাতে হলে গাড়ির মতো বিলাসপণ্য বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, বিলাসপণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক–কর রয়েছে।
দূরত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ বেশি। এ কারণে কম দূরত্বের দেশ ভারত ও চীন থেকে পণ্য আমদানি বেশি হয়। এরপরও পণ্যের মান ও সহজলভ্যতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক পণ্য আমদানি করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ