কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (বাপাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। সোমবার দুপরে এসব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। 

প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘রৌমারী ও রাজীবপুর খুবই ভাঙন কবলিত এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের একটা নজরদারিতে থাকে এই অঞ্চলগুলো। বন্যার আগে কোন এলাকাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো পরিদর্শন আমরা মাঝে মাঝে করি। তারপরও বন্যার সময়ে সব জায়গা পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দ-চাহিদা পাঠানো হয়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবারও একইভাবে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় কোন জায়গাগুলোতে আগামী বন্যায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এই তথ্য সংগ্রহ করছি। 

তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও এলাকাব্যাপী একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। পুরো রৌমারী ও রাজীবপুরকে ঘিরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ২৬ কিলোমিটার রৌমারী ও রাজীবপুরে। আর ৪ কিলোমিটার জিঞ্জিরাম নদী তীর সংরক্ষণ দেওয়া আছে। এ প্রকল্পটি যদি পাস হয় তাহলে পুরো এলাকাটাই ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে।’ পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী আ.

কাদের, রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির, ট্রোসা-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার খায়রন্নেসা সরকার ও প্রভাষক আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।
    
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে রৌমারী উপজেলায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর, উত্তর খাউরিয়া, ঘুঘুমারী, চর ইটালুকান্দা, চর খেদাইমারীর প্রায় ৫০০ মানুষের ভিটেমাটি, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, পাঁচটির বেশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় ভাঙন কবলিত মানুষদের। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় নদী তীরবর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের। কখন যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায় তা নিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় তাদের। ভিটেমাটি হারানো তাদের প্রতিবছরের দুঃখ গাথা। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া সারা বছর কমবেশি ভাঙতে থাকে নদী। 

রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাতাস এখন ভাঙন কবলিত মানুষদের কান্নায় ভারি। টানা বর্ষণে খোলা আকাশের নিচে না করতে পারে রান্না, না থাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রাকৃতিক ক্রিয়াদির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত নারীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে রাত নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দা ছলেমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে চরের মধ্যে দুই কাঠা জমি কিনে ঘর তুলেছিলেন। সেটাও এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবু দাবি একটাই- ত্রাণ নয়, নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।

২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষার নামে সরকারিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের তালিকায় আসছে নতুন নতুন এলাকা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এ অঞ্চলের নিঃস্ব, অসহায় মানুষ বারবার লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

রৌমারীকে বাঁচাতে হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমিহারা মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকারকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। এই অভাবী জনপদের বেশির ভাগ মানুষকে বছরের ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থান হলে তাদের ছিন্নমূল জীবনের অবসান ঘটবে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ ন এল ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ